ইসলামিক প্রতিবেদক : শবে বরাতের অর্থ হচ্ছে ভাগ্য রজনী।শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত পালিত হয়।এই পবিত্র রজনী আল্লাহ প্রদত্ত তার বান্দাদের জন্য বরকতময় সুবর্ণ সুযোগ। এই পবিত্র রজনীতে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ তার প্রিয় মুমিন বান্দাদের ওপর বর্ষিত হয়।
আরও পড়ুনঃ
শবে বরাতের তাৎপর্য ও ফজিলত
শবে বরাত সম্পর্কে পবিত্র আল কোরআনে যা বলা হয়েছে : পবিত্র আল কোরআনে বলা হয়েছে ‘হা-মিম! শপথ! উজ্জ্বল কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয়ই আমি ছিলাম সতর্ককারী। যাতে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এ নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয়ই আমিই দূত পাঠিয়ে থাকি।’ (সুরা-৪৪ দুখান, আয়াত: ১-৫)। মুফাসসিরিনগণ বলেন: এখানে ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ বা বরকতময় রজনী বলে শাবান মাসে পূর্ণিমা রাতকেই বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে মাজহারি, রুহুল মাআনি ও রুহুল বায়ান)। হজরত ইকরিমা (রা.) প্রমুখ কয়েকজন তাফসিরবিদ থেকে বর্ণিত আছে, সুরা দুখান–এর দ্বিতীয় আয়াতে বরকতের রাত বলে শবে বরাতকে বোঝানো হয়েছে। (মাআরিফুল কোরআন)।
আরও পড়ুনঃ
শবে বরাত সম্পর্কে হাদিসে যা বলা আছে :
হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রাঃ) তার ‘কিতাবুস সহীহ’ গ্রন্থে বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।
( কিতাবুস সহীহ১৩/৪৮২এ)
হজরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সিজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ করে বললেন, “হে আয়শা! তোমার কি এ আশঙ্কা হয়েছে?” আমি উত্তরে বললাম, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না।’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘তুমি কি জানো এটা কোন রাত?’ আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই ভালো জানেন।’ তখন নবীজি (সা.) বললেন, ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন, ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।’ (শুআবুল ইমান,
শবে বরাতের রোজা :
হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি হাসিসে নবী কারীম (সা.)বলেছেন, পনের শাবানের রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত বন্দেগীতে কাটাবে এবং দিনের বেলা রোজা রাখ। কেননা এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোনও ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি? কোন রিজিক প্রার্থী? আমি তাকে রিজিক দেব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদের ডাকতে থাকেন।(ইবনে মাজা, হাদিস নম্বর-১৩৮৪)
পবিত্র শাবান মাস ও শবেবরাত অধিক ইবাদতের উর্বর মৌসুম। শবেবরাত কোনো আনন্দ-উৎসবের সময় নয়।পবিত্র শবে বরাত পালন করতে গিয়ে আতশবাজি করা, হালুয়া-রুটির আয়োজন করা, বিশেষ পদ্ধতির নামায পড়াকে জরুরি মনে করা হয়! এছাড়া এই রাতে গোসল করা ফযিলতপূর্ণ বলে মনে করা হয়,অনেকেই এই রাতে মসজিদে গিয়েই ইবাদত করাটা বাধ্যতামূলক মনে করেন যা সম্পুর্ণ ভাবে বিদআত।এসব করা কোন ভাবেই জায়েজ নয়।কাজেই শবে বরাত শুধু ‘আমলের বিষয় নয়, আকীদাহরও বিষয়। তাই এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক হতে হবে।
আরও পড়ুন:
0 মন্তব্যসমূহ