ব্রণের কারণ ও ব্রণ থেকে মুক্তির উপায়

ব্রণের কারণ ও ব্রণ থেকে মুক্তির উপায়

ত্বকের একটি অস্বস্তিকর সমস্যা নাম হচ্ছে ব্রণ। অনেকেরই ব্রণ হয় এবং তা পরিচর্যা করলে সেরে যায়। আবার কিছু ব্রণ আছে যা সহজে সারতেই চায় না, সারলেও বারবার ফিরে আসে। এতে ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। বয়ঃসন্ধির শুরু থেকে ছেলে মেয়েদের ত্বকে ব্রণের প্রবণতা দেখা দেয়। তখন তাদের অনেকে সৌন্দর‌্য্য নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে।

ব্রণ কেন হয়?
 ব্রণ ত্বকের একটা ক্রনিক (দীর্ঘস্থায়ী) সমস্যা। আমাদের ত্বকের নিচে যে সিবাসিয়াস গ্ল্যান্ড বা তৈলগ্রন্থি থাকে। বেশি কাজের জন্য এবং এর সাথে ঘর্মগ্রন্থী বড় হয়ে যাবার কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়। তৈলগ্রন্থী ও ঘর্মগ্রন্থীর অস্বাভাবিকতার জন্য আবার শরীরে বেশি পরিমাণ এন্ডোজেন হরমোন যেমন টেস্টোস্টেরন হরমোন দায়ী।ব্রণের সাথে জীনের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে জেনেটিক সম্পৃক্ততা রয়েছে ব্রণের সাথে।

ব্রণ কোথায় হয় ?
-সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় মুখমণ্ডল
-ত্বকের উপরের অংশ।
-পিঠের নানা অংশে।
আরও পড়ুন 
ব্রণের ক্ষতিকর প্রভাব
-আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি দেখা দেয়। স্বাভাবিক কাজ কর্ম বাধাগ্রস্ত হয়।    
-জটিল ধরনের ব্রণ ত্বকে গর্ত করে দিতে পারে।
-টিনেজার মনোজগতে এই ব্রণ মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলে।
-তরুণীরা দুঃশ্চিন্তা ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এমনকি কারো কারো মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা যায়।

ঘরের কিছু নিত্য ব্যবহার্য জিনিস দিয়েই ব্রণ দূর করা সম্ভব। ভারতের ‘দ্য ন্যাশনাল স্কিন সেন্টার’য়ের পরিচালক নাভিন তানিজা ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে কয়েকটি ঘরোয়া উপকরণের নাম উল্লেখ করেন
ব্রণ থেকে মুক্তি  ঘরোয়া উপকরণগুলি হল:

রসুন
রসুন ব্রণের বড় শত্রূ। এটি ব্যবহার করাও খুব সহজ। এক-দু কোয়া রসুন দুই টুকরো করে কেটে নিন। তারপর ব্রণের জায়গায় রসটুকু লাগান। মিনিট পাঁচেক পরে ধুয়ে ফেলুন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এটি করলে পরদিন সকালে ত্বকের উন্নতি টের পাবেন।

আলু
সবজির ঝুড়িতে থাকে আলু। রান্নার কাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার আলুর। আলু ছাড়া যেন একটি দিনও চলে না। সেই আলুতেই রয়েছে ব্রণের সমস্যা সমাধানের উপায়। আলু মানেই কার্বোহাইড্রেট আর অতিরিক্ত ক্যালরি- তা নয়। আলুর খোসায় আছে ভিটামিন 'এ', পটাশিয়াম আয়রন, অ্যান্টি-অক্সাইড, ফাইবারসহ প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট। আলুর মধ্যে আছে প্রদাহজনিত সমস্যা নিবারণের ক্ষমতা। ফলে ত্বকে কোনোরকম জ্বালা, পোড়া বা কোনোরকমের সংক্রমণ হলে তা সারাতে আলু দারুণ কাজ দেয়।

লেবুর রস
খাবার টেবিলে এক টুকরো লেবু না হলে খাবার যেন হজমই হয় না। সেই লেবুতেই হবে ব্রণ দূর। লেবুর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যাসিড বা ক্ষার জাতীয় উপাদান। ফলে এটি প্রাকৃতিক ক্লিঞ্জার হিসাবে কাজ করে। সূর্যের তাপে ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক থেকে পোড়া ছোপ ছোপ দাগ যেমন দূর করতে পারে, তেমনই ত্বকের রোমগ্রন্থির মুখ উন্মুক্ত করে দিতেও সাহায্য করে লেবুর রস। লেবুর রস একটি প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিঞ্জেন এবং এতে প্রচুর পরিমাণে জীবাণুনাশক উপাদান উপস্থিত রয়েছে।

শসা
শসায় রয়েছে ভিটামিন এ, ডি এবং ই। এর প্রতিটি উপাদানই ত্বকের জন্য মারাত্মক ভালো। শসা থেঁতো করে মুখে লাগিয়ে রাখতে পারেন। ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখার পর ঠান্ডাপানিতে মুখ ধুয়ে নিন। এছাড়াও শসাকে অন্যভাবে ব্যবহার করতে পারেন। শসা গোল গোল করে কেটে অন্তত একঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর সেই পানি খেয়ে নিতে পারেন বা ওই পানি দিয়ে মুখও ধুয়ে নিতে পারেন।
আরও পড়ুন 
হলুদ
ত্বকের যে কোনো সমস্যা সমাধানে হলুদের ব্যবহার অনস্বীকার্য। মনে রাখতে হবে যে, আমাদের ত্বকের ক্ষতির জন্য দায়ী থাকে বেশ কয়েক রকম আণুবীক্ষণিক জীবাণু। এসব জীবাণু দূর করে ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে হলুদ। ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করতে পারে হলুদ। ফলে ব্রণ সারতে সময় নেয় না। হলুদে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।

টমেটো
সবজির ঝুড়িতে থাকা আরেকটি সবজি টমেটো। তা দিয়েই সমাধান পেতে পারেন ব্রণ সমস্যার। ত্বক এবং চুলের যত্নে টমাটোর জুড়ি মেলা ভার। কারণ টমাটোর মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ উপাদান এবং ভিটামিন। এই উপাদানগুলো ত্বককে আদ্র রাখে। ফলে ব্রণের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। সেইসাথে রক্ত চলাচলের উন্নতি ঘটায়, লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ বৃদ্ধি করে, কোলেস্টেরলের সমস্যা দূর করে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।

বরফ
ফ্রিজ খুললেই বরফ। সহজলভ্য একটি জিনিস। সেই বরফেই হবে ব্রণের চিকিৎসা। বরফ কতটা ঠাণ্ডা, সেটা নিশ্চয় কাউকে বুঝিয়ে বলতে হবে না। এর এই অতি ঠাণ্ডা চরিত্রই নানা ধরনের ত্বকের রোগ সারাতে সাহায্য করে। আসলে বরফ ত্বকের রক্তনালীকে সংকুচিত হতে সাহায্য করে। ফলে প্রদাহজনিত সমস্যা হতে পারে না। অন্যদিকে বরফ ত্বককে ঠাণ্ডা রাখে বলে চামড়া ফেটে যাওয়া বা ফুলে ওঠার মতো সমস্যা হতে দেয় না।

বেকিং সোডা
রান্না ঘরে মশলার তাকেই থাকে বেকিং সোডা। ব্রণ সারিয়ে তুলতে দারুণভাবে কাজে দেয় বেকিং সোডা। এমনকি ভবিষ্যতে যাতে ব্রণ ফিরে আসতে না পারে তারও ব্যবস্থা করে বেকিং সোডা। এছাড়াও কোনো কারণে ত্বকে প্রদাহজনিত সমস্যা হলে তারও সমাধান করে বেকিং সোডা। ব্রণ শুকিয়ে গেলে দাগ হয়ে বসে যায় ত্বকে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে বেকিং সোডা।

টুথপেস্ট
ঘুম থেকে উঠেই যা খুঁজতে হয় তা হলো টুথপেস্ট। নিত্যদিনের সঙ্গি বেসিনে থাকা টুথপেস্ট দিয়ে করে ফেলুন ব্রণের চিকিৎসা। কি অবাক হচ্ছেন? ত্বকের নানা সমস্যা সমাধানে দারুণ কাজ করে টুথপেস্ট। এর কারণ হলো এতে থাকে সিলিকা নামক একটি উপাদান, যা স্কিনের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সাহায্য করে। ফলে ব্রণের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। তবে মনে রাখতে হবে, হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি টুথপেস্টেই এই সিলিকা নামক উপাদান থাকে। তাই ব্যবহার করার আগে টুথপেস্টের উপাদানগুলো দেখে নিন।

ভিনেগার
আজকাল বেশ পরিচিত একটি নাম অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার। অনেকেই কিনে আনেন, আবার অনেকেই বানিয়ে রাখেন ঘরে। অনেকেই জানেন, সাধারণত রান্নায় ব্যবহার হয় আপেল সাইডার ভিনেগার। তবে শুধু রান্নার ক্ষেত্রেই নয়, আপেল সাইডার ভিনিগারের উপকারিতা অনেক। ব্রণ এবং ফুসকুড়ির মতো সমস্যাকে খুব সহজেই সারিয়ে তুলতে পারে আপেল সাইডার ভিনিগার। কারণ এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জীবাণুনাশক উপাদান। সেইসাথে থাকে ম্যালিক অ্যাসিড, যা প্রায় সব ধরনের জীবাণু এবং ছত্রাকের সঙ্গে লড়তে পারে। ফলে ত্বকে ব্রণের মতো সমস্যার সমাধান হয়।

নিম
ছত্রাক-নাশক গুণাবলীতে ভরপুর নিম। যা ব্রণের সমস্যার কার্যকর সমাধান। নিমপাতার পেস্টের সঙ্গে অল্প পানি মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এটি ব্রণের সমস্যা উপশমে সাহায্য করবে।

মধু
জীবাণু নাশক এবং ময়েশ্চারাইজ করার গুণাবলীতে ভরপুর মধু। ব্রণ আক্রান্ত ত্বকে আধা ঘণ্টার জন্য মধু লাগিয়ে রাখতে হবে

আরও পড়ুন 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ