আখেরি চাহার শোম্বার কি
আখেরি চাহার সোম্বা’ বাক্যটি ফারসি ভাষার। এর বাংলা অর্থ ‘শেষ বুধবার’। ১১ হিজরির শুরুতে আল্লাহর প্রিয় হাবিব নবী ও রাসুল মুহাম্মদ (সা.) গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ক্রমেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তিনি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে, নামাজের ইমামতি পর্যন্ত করতে পারছিলেন না। অবশেষে মাসের শেষ বুধবার বা ২৮ সফর মহানবী (সা.) সুস্থ হয়ে ওঠেন। এই দিন সুস্থবোধ করায় রাসুলুল্লাহ (সা.) গোসল করেন এবং শেষবারের মত নামাজে ইমামতি করেন। মদিনাবাসী এই খবরে আনন্দ-খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েন এবং দলে দলে নবীজীকে একনজর দেখতে মসজিদে নববীতে জড়ো হন। সবাই যার যার সাধ্যমতো দান-সাদকা করেন এবং শুকরিয়া নামাজ আদায় ও দোয়া করেন।অনেকে খুশি হয়ে তাদের দাস মুক্ত করে দেন, কেউ অর্থ বা উট দান করেন। মহানবীর (সা.) রোগমুক্তি ও সুস্থতার কারণে কৃতজ্ঞতা হিসেবে মুসলিম উম্মহ দিনটি এবাদত বন্দেগি ও শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করেন।
এ সম্পর্কে আরও পড়ুন: আল-কুরআনের বাণী
আখেরি চাহার শোম্বার তাৎপর্য
এ সম্পর্কে হজরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, একদিন রাতে হুজুর (সা.) কবর জিয়ারতের জন্য বের হলেন। আমিও তাঁর পেছন পেছন গেলাম। আমার সন্দেহ হলো, তিনি বোধহয় আমার হক অন্য কাউকে দিয়ে দেবেন। কিন্তু না, তিনি দীর্ঘ সময় কবরবাসীর জন্য দোয়া করলেন। হুজুর (সা.) যখন ঘরে ফিরে এলেন আমিও ঘরে ফিরে এলাম। আমি চাইছিলাম, তাঁকে অনুসরণ করার বিষয়টি যেনো তিনি বুঝতে না পারেন। কিন্তু আমাকে হাঁপাতে দেখে ঠিকই বুঝে ফেললেন আমি তার পেছন পেছন গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, আয়শা! তোমার সন্দেহ ভুল ছিলো। ঠিক সেই সময় নবী (সা.) মাথা ব্যথা শুরু হয়।প্রচন্ড মাথা ব্যথা তার ওপর ভীষণ জ্বর নিয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলেন হযরত মোহাম্মদ (সা.)। তিনি বারবার বলতে লাগলেন এ আমার শেষ যাত্রার অসুখ। আল্লাহতায়ালা তার নবীদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন, তাই তাদেরকে তিনি সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় করেন। তবে অন্যসব নবী যত কষ্ট পেয়েছেন আমি তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি কষ্ট পাচ্ছি।
আরও পড়ুন: নবীজি : হুমায়ুন আহমেদ
নবী (সা.) কষ্ট সবাইকে খুব কষ্ট দিচ্ছিলো। সবাই ধরেই নিয়েছে নবী (সা.)আর সুস্থ হয়ে ওঠবেন না। কিন্তু সফর মাসের শেষ বুধবার হঠাৎ হযরত (সা.) সুস্থ হয়ে ওঠলেন। তিঁনি গোসল করলেন। কলিজার টুকরো ফাতেমা এবং দুই নাতিকে সঙ্গে করে ভালো খাবার খেলেন। জামাতের সঙ্গে জোহরের সালাত আদায় করলেন। এসব দেখে সাহাবিরা যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেলেন।
সিরাতবিদরা বলেন, নবীজির (সা.) সুস্থতায় খুশি হয়ে আবু বকর পাঁচ হাজার, ওমর সাত হাজার, আলী তিন হাজার দেরহাম এবং আবদুর রহমান বিন আওফ একশ উট আল্লাহর ওয়াস্তে দান করলেন। অবশ্য বিকেলের দিকেই হযরত মোহাম্মদ (সা.) আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং অল্প কিছুদিন পর তিনি ওফাত লাভ করেন।
নবীজির সুস্থতায় আনন্দিত হয়ে সাহাবীদের অকাতরে দান-সদকা এবং নফল ইবাদতের সুন্নাতটি সে থেকে আজ পর্যন্ত নবীপ্রেমিক সুফিরা জারি রেখেছেন। তাই নবীজির সুস্থতার দিনে দান-খয়রাত এবং নফল ইবাদত এবং শুকরিয়া দিবস হিসেবে উদযাপন করে থাকেন।
এ সম্পর্কে আরও পড়ুন:

0 মন্তব্যসমূহ