স্বাস্থ্য ডেস্কঃ গর্ভাবস্থা প্রতিরোধে বা এর সম্ভাবনাকে হ্রাস করতে ব্যবহৃত কৌশল বা পদ্ধতিকেই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বলা হয়।
আজ আমরা জানবো জন্মনিয়ন্ত্রণের স্থায়ী ও অস্থায়ী পদ্ধতি এবং প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণের উপায়।
জন্মনিয়ন্ত্রণের অস্থায়ী পদ্ধতি
কনডম
ল্যাটেক্স থেকে কনডম গুলি প্রস্তুত হয় এবং লিঙ্গের উপরের দিকে এগুলি দ্বারা আবৃত করা হয়। এটি লিঙ্গের চামড়া এবং যোনির মধ্যে বাধার সৃষ্টি করে।যার অর্থ কোনো শুক্রাণু যোনিতে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে বাধা পায়।
জন্ম নিয়ন্ত্রক পিল
মনে করা হয় এগুলো হল মহিলাদের গর্ভনিরোধকের সবচেয়ে ভাল উপায়।ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো শত শত গর্ভনিরোধক পিল বা বড়ি বাজারে বিক্রি করে, এবং প্রত্যকেই দাবী করে নানা গুণের অধিকারী কিন্তু আসলে এগুলো মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। প্রথম ধরনের গুলো হল দুটি হুরমোন ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টিন এর সমন্বয়।আর দ্বিতীয় ধরনের গুলো হল শুধুমাত্র প্রোজেস্টিন থাকে।আপনি অবশ্যই আপনার ডাক্ত্রবাবু বা গাইনোকলজিস্ট এর সাথে কথা বলে নেবেন কোনটা আপনার জন্য সবথেকে ভাল হবে।
ফিমেল কন্ডোম
এটা একটা উলটানো থলি বিশেষ যা যোনিতে পড়তে হয় এবং এটি নির্গত হওয়া পদার্থকে সংগ্রহ করে এবং শুক্রাণুকে যোনিতে প্রবেশে বাঁধা দেয়।এটা অপসারন যোগ্য এবং সঙ্গমের আট ঘন্টা আগে পড়তে হয়।
ডায়াফ্রাম
এটা সারভিক্সের ওপর সঙ্গমের ঠিক আগে লাগাতে হয়।এটা রাবারের তৈরী হয় এবং দেখতে গম্বুজের মত।এগুলো স্পার্মিসাইডের সাথেও ব্যবহার করা হয়।
ভ্যাজাইন্যাল রিং
ভ্যাজাইন্যাল রিং হল একটা আংটির মত গোলাকার বস্তু যা যোনিতে আটকানো হয় এবং এটা খাবার পিল গুলোর মত ই হরমোন ক্ষরণ করে।এটা মাসে একবার লাগাতে হয়।
আই ইউ ডি
আই ইউ ডি কথাটির অর্থ হল ইন্ট্রাইউটেরাইন ডিভাইস। এটা হল T আকৃতির প্লাস্টিকের তৈরী একটি ডিভাইস যা দুটি ভ্যারাইটির হয়। প্রথমটি হল হরমোন আই ইউ ডি যা প্রোজেস্টেরন নিসৃত করে গর্ভধারণ রোধ করে আর দ্বিতীয়টি হল কপারের (তামার) তৈরী। দুটি জিনিসই শুক্রাণুকে ওভাতে পৌঁছাতে বাঁধা দেয়।
উইথড্রল
এটি বহিঃনির্গমনের একটি অন্যতম পুরানো পদ্ধতি। উইথড্রল পদ্ধতিতে লিঙ্গ-কে বের করে সরিয়ে নিয়ে আসা হয় নির্গমনের ঠিক আগের মুহূর্তে।
জন্মনিরোধোক ইঞ্জেকশান
এটা এমন একটা ইনজেকশান যা প্রতি তিন্মাস অন্তর নিতে হয়।এই গর্ভনিরোধক শট গর্ভসঞ্চারের সম্ভবনা কমায় নাটকীয় ভাবে,এবং বছ্রে মাত্র চারবার আপনাকে এটা নিতে হয়।
জন্মনিয়ন্ত্রণের স্থায়ী পদ্ধতি
লাইগেশন
নারীদের ক্ষেত্রে লাইগেশন একটা অত্যন্ত কার্যকর জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। ডিম্বনালী গর্ভাশয় থেকে জরায়ুতে ডিম্বানু পরিবহন করে। তাই ডিম্বানালীকে কেটে বেঁধে দিলে ডিম্বাণু জরায়ুতে আসতে পারে না।এক্ষেত্রে খুবই ছোট একটা অপারেশনের মাধ্যমে ইউটেরাসের টিউব বন্ধ করে দেয়া হয়। জরায়ু নালি বন্ধ করায় শুক্রাণু ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হতে পারে না। ফলে গর্ভধারণের কোনো সম্ভাবনা থাকে না।
ইমপ্ল্যান্ট
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নারীদের বন্ধ্যাত্বকরণে নতুন একটি পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে ছোট একটা মেটালিক ইমপ্ল্যান্ট জরায়ু নালিতে স্থাপন করা হয়। অভিজ্ঞ চিকিৎসক ক্যাথেটারের সাহায্যে এ ইমপ্ল্যান্ট যোনিপথ দিয়ে উভয় জরায়ু নালিতে বসিয়ে দেন। ইমপ্ল্যান্ট জরায়ু নালিকে ব্লক করে। ফলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে না। তবে এ ইমপ্ল্যান্ট স্থাপনের তিন মাস পর্যন্ত অন্য কোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি চালিয়ে যেতে হয়। তিন মাস পর বিশেষ পদ্ধতিতে এক্সরে করে দেখা হয়, ইমপ্ল্যান্ট সঠিক স্থানে এবং কার্যকর অবস্থানে আছে কি না।
আরও পড়ুনঃ যৌন মিললের ইসলামিক নিয়ম
পুরুষ বন্ধ্যাত্বকরণ
পুরুষদেরকে স্থায়ীভাবে বন্ধ্যা করতে যে পদ্ধতিটির সাহায্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ করা হয় তাকে ভ্যাসেকটমি বলা হয়। পুরুষ বন্ধ্যাত্বকরণ বা ভ্যাসেকটমি খুবই সহজ ও কার্যকর একটি স্থায়ী পদ্ধতি। এক্ষেত্রে শুক্রনালির পথ বন্ধ করে দেয়া হয়।শুক্রাশয়ের এক পাশে ছোট একটি জায়গা অবশ করে শুক্রনালি পথ কেটে দুই প্রান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়। ছোট্ট এই অপারেশনের পরপরই বাড়ি চলে যাওয়া যায়।মনে রাখতে হবে ভ্যাসেকটমি করার সাথে সাথেই এটি কার্যকরী হয় না। অপারেশনের পর ঝুঁকিমুক্ত হতে কমপক্ষে ২০ বার বীর্যপাত হওয়া প্রয়োজন। কারণ শুক্রনালীর যেখানে বাঁধা হয়েছে তার উপরে স্পার্ম বা শুক্রাণু থাকতে পারে। যতক্ষণ পর্যন্ত না ডাক্তার একেবারে নিশ্চিত হতে না পারবে, ততোদিন পর্যন্ত জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য অন্য পদ্ধতি যেমন কনডম ও ফোম অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত।
প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণের উপায়
জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য সকলেই গর্ভনিরোধক ট্যাবলেট কিংবা কনডমের ওপরই ভরসা করেন। কিন্তু, আধুনিক পদ্ধতি ছাড়াই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। এই সম্পর্কে ধারণা থাকলে চিকিৎসকের কাছেও যাওয়ার প্রযোজন পড়ে না। মহিলাদের স্বাভাবিক ঋতুচক্র প্রাকৃতিকভাবে নির্ধারিত। এতে এমন কিছুদিন রয়েছে, যাকে নিরাপদ দিন বা সেফ পিরিয়ড বলা হয়। এই দিনগুলিতে সহবাস করলেও গর্ভধারণের ঝুঁকি থাকে না। সেফ পিরিয়ডের দিনগুলিও প্রকৃতিগতভাবে নির্দিষ্ট। এই কারণেই একে প্রাকৃতিক পরিবার পরিকল্পনা বলা যেতেই পারে। চিকিৎসকরা এতে অনেক সময় ক্যালেন্ডার পদ্ধতিও বলে থাকেন। এই পদ্ধতি কার্যকর করতে অবশ্যই জানা দরকার ঋতুচক্রের নিরাপদ দিন কোনগুলি। এই পদ্ধতির জন্য সবার আগে জানতে হবে মাসিক ঋতুচক্র নিয়মিত হয় কিনা। হলে তা কতদিন অন্তর হয়। সবচেয়ে কম যত দিন পর পর মাসিক হয়, তা থেকে ১৮ দিন বাদ দিতে হবে। পিরিয়ড শুরুর প্রথম দিন থেকে এই দিনটিই হলো প্রথম অনিরাপদ দিন। আবার সবচেয়ে বেশি যতদিন পরপর পিরিয়ড হয়, তা থেকে ১০ দিন বাদ দিলে মাসিক শুরুর প্রথম দিন থেকে এই দিনটিই হলো শেষ অনিরাপদ দিন। ধরুন, আপনার পিরিয়ড ২৮ থেকে ২০ দিন অন্তর হয়। তবে ২৮-১৮= ১০, অর্থাৎ পিরিয়ড শুরুর পর থেকে প্রায় ৯ দিন আপনার জন্য নিরাপদ, এই দিনগুলিতে কোনো পদ্ধতি ব্যবহার না করেও সহবাস অনায়াসেই করা সম্ভব। ১০ নম্বর দিন থেকে অনিরাপদ দিন শুরু। তাই এই দিন থেকে সহবাসে সংযত হতে হবে। ৩০ দিন হলো দীর্ঘতম মাসিকচক্র। তাই ৩০-১০= ২০, অর্থাৎ ২০ নম্বর দিনটিই হলো শেষ অনিরাপদ দিন। ২১তম দিন থেকে আবার অবাধে সহবাস করা যেতে পারে। এতে গর্ভধারণের সম্ভাবনা নেই। তবে, এতে ১০ থেকে ২০ দিনের মধ্যে অবাধ সহবাসের ফলে গর্ভধারণ হতে পারে। এই বিষয়েটি সহজভাবে বোঝালে পিরিয়ড শুরুর প্রথম সাত দিন ও শেষের প্রথম সাত দিন সহবাস করা নিরাপদ। তবে, পিরিয়ড নিয়মিত না হলে এই পদ্ধতি কার্যকর হবে না। এ ছাড়াও প্রাকৃতিক জন্মনিয়ন্ত্রণ ৮০ শতাংশ নিরাপদ। সাধারণত, পিরিয়ডের হিসেবে গণ্ডগোল, অনিরাপদ দিবসে সহবাস, অনুমিত পিরিয়ডের ফলে প্রাকৃতির গর্ভনিরোধকের পদ্ধতি ব্যর্থ হতে পারে। তাই, সঠিকভাবে জানতে একবার অন্তত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। আবার কিছু পুরুষের শুক্রাণুর আয়ু বেশি হওয়ায় তারা এতে সাফল্য নাও পেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে অনিরাপদ দিবসে দুই দিন বাড়িয়ে নেওয়া প্রয়োজন। একে অনেকে প্রোগ্রামড সেক্স বলে। অনেকেই এ বিষয়ে সংশয় পোষণ করেন, কিন্তু একবার এই পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে এটি অনেক বেশি সহজ ও আরামদায়ক। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
0 মন্তব্যসমূহ