যৌনরোগের কারণ ও যৌন রোগ প্রতিরোধের উপায়

 

যৌনরোগের কারণ ও যৌন রোগ প্রতিরোধের উপায়


স্বাস্থ্য ডেস্ক : প্রজনন তন্ত্রের যে কোন সংক্রমণকে যৌন রোগ বলা হয়। প্রজনন তন্ত্রের সংক্রমনের আওতায় মূলত তিনটি বিষয় রয়েছে: ১) যৌন বাহিত রোগ (STD)। ২) প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ (Endogenous infection)। ৩) আয়াট্রোজেনিক (Iatrogenic) সংক্রমন-যা চিকিৎসাকর্মীদের অসর্তকতার কারণে হয়ে থাকে। 

যৌনরোগের কারণ ও লক্ষণ
গনোরিয়া
সচরাচর ক্ল্যামিডিয়া এব‌ং গনোরিয়া একই সঙ্গে হয়। যোনি বা পুরুষাঙ্গ থেকে অস্বাভাবিক ক্ষরণ, মূত্রত্যাগ করার সময় যন্ত্রণা ইত্যাদি এই রোগের লক্ষণ। চিকিৎসা না করলে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এই রোগ।

সিফিলিস
প্রাচীনকাল থেকেই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে মানুষ। ঠিক সময়ে ধরা পড়লে সাম্প্রতিককালে সহজেই সারানো যায় এই রোগ। কিন্তু রোগ বেড়ে গেলে তা সাংঘাতিক যন্ত্রণাদায়ক। যৌনাঙ্গ, পায়ু এবং মুখে আলসার হয়, এমনকী চোখ এবং মস্তিষ্কও আক্রান্ত হয়। যৌনরোগগুলোর মধ্যে অন্যতম মারণ রোগ। তবে প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগের লক্ষণ শরীরে চট করে ধরা পড়ে না।

এইচআইভি
এইচআইভি ভাইরাস মারণ নয় কিন্তু এই রোগের মূল লক্ষণ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে পড়া। তাই এই ভাইরাস শরীরে থাকলে অন্য যে কোনও কঠিন রোগ হলে তা মারণ আকার ধারণ করে।

যৌনাঙ্গে হার্পিস
৮০ শতাংশ মানুষ যাদের যৌনাঙ্গে হার্পিস রয়েছে তারা জানেন না, তাদের শরীর আসলে একটি বিশেষ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত। অজান্তেই তারা সঙ্গী বা সঙ্গিনীর শরীরে সংক্রামিত করেন এই ভাইরাস। যৌনাঙ্গে ছোট ছোট ফোস্কার মতো র‌‌্যাশ এই রোগের লক্ষণ। ফোস্কা পরার বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে চুলকানির অনুভূতি হয় যৌনাঙ্গে। একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর বার বার এই র‌্যাশগুলো বেরতে থাকে।
যৌনাঙ্গে আঁচিল 
যৌনাঙ্গ এবং পায়ুর আশেপাশে আঁচিলের মতো র‌্যাশ এক ধরনের যৌন রোগ। একত্রে একসঙ্গে অনেকগুলো আঁচিল দেখা যায়। হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস, যা সার্ভিক্যাল ক্যানসারের কারণ এবং যৌন সংসর্গে এক শরীর থেকে অন্য শরীরে ছড়ায়, তাই এই রোগের জন্ম দেয়। অনেক সময় এই আঁচিলগুলো ফোস্কার মতো হয় আবার অনেক সময় এগুলো আলসারেও পরিণত হতে পারে।

হেপাটাইটিস বি
অনেকেই হয়তো জানেন না, এই রোগটিও যৌন সংসর্গের ফলে ছড়ায়। একইভাবে ছড়াতে পারে হেপাটাইটিস এ এবং হেপাটাইটিস সি তবে তার সংখ্যা খুবই কম। লিভার সংক্রান্ত জটিলতা, মূত্রের রং পরিবর্তন, গা বমি ভাব ইত্যাদি এই রোগের লক্ষণ হতে পারে।

ট্রাইকোমোনিয়াসিস
যৌনাঙ্গ থেকে অস্বাভাবিক ক্ষরণ, যৌনক্রিয়ার সময় যৌনাঙ্গে যন্ত্রণা এবং মূত্রত্যাগের সময় যন্ত্রণা এই রোগের লক্ষণ যদিও সঠিক চিকিৎসায় দ্রুত সেরে ওঠা সম্ভব।

ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস
যোনি থেকে নিঃসরণে দুর্গন্ধ এই রোগের লক্ষণ। অন্যান্য রোগের তুলনায় এই রোগ খুব সহজেই সেরে যায়।

যৌনকেশে উকুন
মাথার চুলের মতো যৌনাঙ্গের কেশেও উকুন বাসা বাঁধতে পারে এবং শারীরিক মিলনের সময়ে তা অন্যের শরীরে সংক্রামিত হয়। যৌনাঙ্গের আশপাশে চুলকানি হলে তা এই কারণে হতে পারে।

ক্ল্যামিডিয়া
যোনি এবং পুরুষাঙ্গ থেকে অস্বাভাবিক ক্ষরণ এই রোগের লক্ষণ। গড়ে ৫০ শতাংশ পুরুষ ও ৭০ শতাংশ মহিলাদের মধ্যে এই রোগ দেখা যায়। দ্রুত চিকিৎসা করলে সেরে ওঠা সম্ভব। ক্ল্যামিডিয়া হলে খুব সহজেই অন্যান্য যৌনরোগ বাসা বাঁধে শরীরে। 
যৌন রোগ প্রতিরোধের উপায় 
-কনডমের সঠিক ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রে যৌনরোগ প্রতিরোধ করে।

-রোগীর যৌন সঙ্গীর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে এ রোগ অন্যদের মধ্যে না ছড়ায়। প্রয়োজনে কনডম ব্যবহার করতে হবে।

-একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়া শারীরিক সম্পর্কের পর যৌনাঙ্গ ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে।

-কেউ যদি মনে করে তার যৌন রোগ আছে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষা এবং চিকিৎসা করানো উচিত। শুরুতে যৌন রোগের চিকিৎসা করা সহজ, পরে চিকিৎসা করা কঠিন।

আরও পড়ুনঃ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ