সাদকায়ে জারিয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত -Religion -

সাদকায়ে জারিয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত  -Religion  -

ইসলামিক ডেস্কঃ  দুনিয়ার জীবন অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী।এই ক্ষণস্থায়ী জীবন, বান্দাদের জন্য পরিক্ষাগার।  মানুষ দুনিয়ায় ভালো কাজ করবে, সে আখেরাতে এর উত্তম প্রতিদান পাবে, আর যে মন্দ কাজ করবে সেও আমল অনুযায়ী প্রতিদান পাবে। আল্লাহর অফুরন্ত রহমতের আশা এবং হিকমত তথা সাদকায়ে জারিয়ার মতো নেক আমল করে যেতে হবে। যে আমল মৃত্যুর পরেও কিয়ামত পর্যন্ত চলমান থাকবে।  সাদকায়ে জারিয়া এমন একটি আমল যা দুনিয়ার জীবনে করলে মৃত্যুর পরেও মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির  আমলনামায় সাওয়াব যেতে থাকে।

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা  বলেন,
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাত বরবাদ করো না সে ব্যক্তির মতো যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। অতএব, এ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মতো যার ওপর কিছু মাটি পড়েছিল। অতঃপর এর ওপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হলো, অনন্তর তাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিল। তারা ঐ বস্তুর কোনো সওয়াব পায় না, যা তারা উপার্জন করেছে। আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত ২৬৪)।

এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে, তখন তার সব আমলের পথ বন্ধ হয়ে যায়; শুধু ৩টি পথ খোলা থাকে। তা হলোঃ ১) সাদকায়ে জারিয়া। ২) উপকারি ইলম বা জ্ঞান।৩) নেককার সন্তান-সন্ততি; যে তার মৃত্যুর পর দোয়া করে।’ (মুসলিম)।
সাদকায়ে জারিয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত 
হজরত আবু হুরায়াহ (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসূল পাক (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে, তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি ব্যতিত, সদকায়ে জারিয়া, উপকারী জ্ঞান অথবা সৎকর্মশীল সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।’ (সহিহ মুসলিম শরীফ, হাদিস নং-১৬৩১)।

সাদকায়ে জারিয়া সম্পর্কে রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন- ‘এমন ৭টি কাজ রয়েছে; যা বান্দার মৃত্যুর পরও কবরে থাকা অবস্থাতেও তার জন্য সওয়াব জমা করতে থাকবে। 
তাহলোঃ 

মসজিদ নির্মাণ বা দান
কেউ মসজিদ নির্মাণ করলে বাম মসজিদের কাজে দান করলে, সে মসজিদে দানকারীর সাদকায়ে জারিয়ার উপলক্ষ্যহয়ে যাবে। মানুষ যতদিন এ মসজিদে নামাজ পড়বে; ইবাদত-বন্দেগি করবে, ততদিন মসজিদ নির্মাণকারী ব্যক্তিআর আমলনামায় এর সাওয়াব পৌঁছতে থাকবে। এটিও সাদকায়ে জারিয়া। শুধু মসজিদই নয়, মক্তব, মাদরাসা, বিশ্রামাঘার, মুসাফিরখানা ইত্যাদিও হতে পারে।
ইলম বা জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া 
এমন ব্যক্তি যাকে সে ভালো ইলম বা জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছে। আর ওই ব্যক্তি এ জ্ঞান মানুষের কাছে পৌছে দেয়। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, ‘তোমাদের কাছে যদি (জ্ঞানের) একটি নিদর্মণ বা চিহ্নও থাকে তবে তা অন্যের কাছে পৌছে দাও।

কূপ খনন বা গভীর নলকুপ স্থাপন করা
মানুষের পাণীয় ও কৃষ্টি জমিতে সেচের জন্য কুপ কিংবা গভীর-অগভীর নলকুপ স্থাপন করাও সাদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভূক্ত। যদি তা থেকে সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়ে থাকে। যতদিন এর অস্তিত্ব বা কার্যকারীতা থাকবে ততদিন মানুষ সাদকায়ে জারিয়ার হিসেবে সাওয়াব পেতে থাকবে। কূপ খননের সুযোগ না থাকলে, গভীর নলকুপ, পানির ফিল্টার ইত্যাদিও স্থাপন করা যেতে পারে।

খাল খনন করা 
যেই খাল খননের ফলে মানুষ উপকৃত হয়। যতদিন এ খাল থেকে মানুষ উপকার পাবে ততদিন মানুষ কবরে থেকেও সাদকায়ে জারিয়ার সাওয়াব পেতে থাকবে। খাল বা পুকুর খনন করে তাতে পানি সরবরাহের মাধ্যমেও মানুষের উপকার করা যেতে পারে।

কুরআন বিতরণ করা
মানুষের পড়া বা অধ্যয়ন করার জন্য কুরআনের কপি, কুরআনের তাফসির কিংবা কুরআনের দারস সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে কাজ করবে। যতদিন এর উপকার দুনিয়াতে চলমান থাকবে। কুরআনের সুরার আমল ও ফজিলত সম্পর্কিত বই বিতরণ, হাদিসের আমল বিতরণ, হালাল-হারামসহ জনকল্যাণমূলক বইও হতে পারে।

খেজুর গাছ রোপন করা
এমন খেজুর গাছ রোপন করা; যে গাছ মানুষের জন্য খেজুর ও রস দিয়ে যাবে। মানুষ যতদিন এ গাছের খেজুর কিংবা রস পাবে; ততদিন তা রোপনকারীর জন্য সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে সাওয়াব দিয়ে যাবে। এখানে শুধু খেজুর গাছই নয়; বরং ফলদার ও ছায়াদার এবং সুঘ্রাণযুক্ত গাছও হতে পারে।

নেক সন্তান বা বংশধর 
যেসব সন্তান নিজ বাবা-মা, বংশধর ও আত্মীয় স্বজনের জন্য যতক্ষণ বা যতদিন দোয়া করবে, ততক্ষণ বা ততদিন ওই ব্যক্তির আমলনামায় আল্লাহ সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে নেক দান করতে থাকবেন।’ (মুসনাদে আল-বাজ্জার)।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ