আকিকার নিয়ম : আকিকার গুরুত্ব ও ফজিলত -Lifestyle -

আকিকার নিয়ম : আকিকার গুরুত্ব ও ফজিলত

ইসলামিক ডেস্কঃ ইসলামী শরিয়াতের পরিভাষায় নবজাতকের পক্ষ থেকে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করার জন্য পশু জবেহ করা কে আকিকা বলা হয়।

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (সা.) নবুওয়াত পাওয়ার পর নিজের আকিকা নিজে করেছেন।’ (বায়হাকি)।

আকিকার পশু জবাইয়ের সময়
জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করা মুস্তাহাব। হজরত সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক শিশু তার আকিকার বিনিময়ে বন্ধকস্বরূপ। কাজেই সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে জবাই করবে এবং তারা মাথা মুন্ডন করে নাম রাখবে।’ (সুনানে আবু দাউদ ২/৩৯২)। সপ্তম দিনে না পারলে পরে যখনই করবে, সপ্তম দিনের হিসাবে করা উত্তম। অর্থাৎ সপ্তাহের যে বারে শিশু জন্মগ্রহণ করবে, তার আগের বারে আকিকা করবে। শুক্রবার দিন জন্মগ্রহণ করলে বৃহস্পতিবার আকিকা করবে। বৃহস্পতিবার জন্মগ্রহণ করলে বুধবার আকিকা করবে। এভাবে যখনই আকিকা করা হবে এই হিসাবে সপ্তম দিনে পড়বে।
আকিকার পশুর সংখ্যা
ছেলে সন্তানের জন্য দুটি ছাগল আকিকা করতে হয়। আর কন্যা সন্তানের জন্য একটি। হজরত উম্মে কুরজ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘ছেলের জন্য এক ধরনের দুটি বকরি এবং মেয়ের জন্য একটি বকরি আকিকাকরবে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৮৩৪)।

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) তাদেরকে ছেলে সন্তানের জন্য দুটি সমসয়সী ছাগল আর মেয়ে সন্তানের জন্য একটি ছাগল দিয়ে আকিকা করার জন্য নির্দেশ করেছেন।’ (জামে তিরমিজি ১/১৮৩)

আকিকার গোশত বন্টনের নিয়ম
কোরবানির মতো আকিকার পশুর গোশতও তিন ভাগ করে এক-তৃতীয়াংশ নিজের জন্য, এক তৃতীয়াংশ গরিব-মিসকিনদের জন্য সদকা করে দিয়ে বাকি এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া সুন্নত। অবশ্য পরিবারের সদস্য বেশি হলে ইচ্ছা করলে সব গোশতও নিজেদের জন্য রেখে দেওয়া যায়। আকিকার গোশত সচ্ছল আত্মীয়-স্বজনকেও দেওয়া যায়। এখান থেকে আরেকটি বিষয় বুঝা গেল যে, আকিকার গোশত আকিকাদাতা স্বয়ং, যার জন্য আকিকা সে নিজে, পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-অনাত্মীয়, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই আহার করতে পারবেন। কাঁচা গোশত হাদিয়া দিতে পারবেন অথবা রান্না করেও খাওয়াতে পারবেন।

কোরবানির পশুতে আকিকার মাসআলা
ফাতাওয়া শামিসহ ফিকহ-ফাতাওয়ার কিতাবাদিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, কোরবানির সাথে আকিকা শুদ্ধ। (রাদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬; হাশিয়াতুত তহতাভি আলাদ্দুর: ৪/১১৬)

আকিকা নিয়ে কুসংস্কার
অনেকেই মনে করে যে, আকিকার গোশত দাদা-দাদি ও নানা-নানি খেতে পারে না। এ ধারণা ভিত্তিহীন। সন্তানের মাথার চুল মুণ্ডানোর জন্য যখন মাথার উপরের ক্ষুর টানা হবে, ঠিক সেই মুহূর্তে আকিকার জন্তু জবাই করতে হবে, এটাও ভিত্তিহীন। মাথা মুণ্ডানোর আগে-পরে যেকোনো সময় আকিকার পশু জবাই করা যাবে। হজরত আতা (রহ.)-এর এক বর্ণনা মতে, আকিকার পশু জবাই করার আগে মাথা মুণ্ডিয়ে নেওয়া উত্তম। (আল মুকাদ্দামাতুল মুমাহহাদাত : ১/৪৪৯)

আকিকার গুরুত্ব ও ফজিলত
জীবনের প্রারম্ভে নবজাতকের নামে রক্ত প্রবাহিত করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। এটা ইসলামী ভ্যাকসিন। এর মাধ্যমে আল্লাহর হুকুমে অনেক পেরেশানি, বিপদ-মুসিবত ও অসুস্থতা থেকে মুক্তি মিলে। দুনিয়াবি ভ্যাকসিনের সঙ্গে আমাদের আখেরাতের ভ্যাকসিনের প্রতিও গুরুত্বারোপ করা উচিত। সন্তানের আকিকা করার মাধ্যমে কেয়ামতের দিন পিতা সন্তানের সুপারিশের উপযুক্ত হয়। এ ছাড়াও আকিকার মাধ্যমে দানশীলতার বিকাশ ঘটে। গরিব মিসকিন ও আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় হয়। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ে। পরস্পরে হৃদ্যতা ও আন্তরিকতাপূর্ণ ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ