গর্ভাবস্থায় একজন মা ও তার নিজের এবং তার অনাগত বাচ্চার পুষ্টির জন্য অন্য সময়ের চেয়ে অধিক খাবারের প্রয়োজন পরে। আমাদের সমাজে একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে যে,গর্ভাবস্থায় মা অতিরিক্ত ভিটামিন ও পুষ্টিকর খাবার খেলে গর্ভের শিশু বড় হয়ে যাবে! যার ফলে নরমাল ডেলিভারি হবে না। তখন সিজারের প্রয়োজন পড়বে, যা একেবারেই ভিত্তিহীন এবং একটি কুসংস্কার। তাই গগর্ভবতী মায়ের খাবার নির্বাচনের সময় সতর্ক থাকতে হবে, যাতে প্রয়োজনীয় সব রকম উপাদানই খাদ্য তালিকায় থাকে।
গর্ভবতী মা যেসব খাবার খাবেন
অথবা গর্ভবতী মায়ের খাদ্যতালিকা
এ বিষয়ে আরও পড়ুন : গর্ভাবস্থায় রক্তপাত : কারণ এবং প্রতিকার
প্রোটিন
শিশুর দেহে টিস্যু এবং অঙ্গগুলির যথাযথ বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য, প্রোটিনজাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি । প্রোটিন দেহে রক্ত সরবরাহ বাড়ায়, ভ্রূণকে নিয়মিত রক্ত সরবরাহ করতে সাহায্য করে । কিছু স্বাস্থ্যকর প্রোটিন খাবারের মধ্যে রয়েছে মুরগীর মাংস , সালমন, বাদাম, মাখন, পনির এবং মটরশুটি ইত্যাদি ।
ক্যালসিয়াম
এখানে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে , দেখার হাড়গুলি মজবুত করতে এবং শরীরের তরল জাতীয় অর্থাৎ রক্ত,জল ইত্যাদি ঠিকঠাক সরবরাহে ক্যালসিয়াম অপরিহার্য। গর্ভবস্থায় এই ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খাওয়া মা-শিশু দুজনের জন্যই অপরিহার্য। দুধ, দই, পনির, সবুজ পাতাযুক্ত শাকসব্জী,মাছ এবং সামুদ্রিক খাবার যেমন সালমন, চিংড়ি এবং ক্যাটফিশ ভাল পরিমাণে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করতে পারে। এছাড়াও অনেক খাবারে ক্যালসিয়াম মজুত আছে।
ফোলেট
এই ফোলেটকে অনেকে আবার ফোলিক অ্যাসিড নামেও চেনে। শিশুদেহের বিকাশে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শিশুর মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ড সঠিক গঠনের জন্য এর ভূমিকা আছে। এই ফোলেট বা ফোলিক অ্যাসিড বাদাম, শুকনো মটরশুটি এবং মুসুর ডাল , ডিম, বাদাম এবং মাখন জাতীয় খাবারে পাওয়া যায়। তাই গর্ভবস্থায় এই জাতীয় খাবারগুলি খেতে হয়।
আয়রন
গর্ভকালীন অবস্থায় এই জাতীয় খাদ্য শরীরের জন্য কার্যকরী। আয়রন রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং মা এবং শিশুর উভয়কেই পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে সহায়তা করে । সবুজ পাতাযুক্ত শাকসব্জী, সাইট্রাস ফল, হাঁস-মুরগির ডিম এই জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমানে আয়রন মেলে।
গর্ভাবস্থায় প্রত্যেক মহিলাকেই চিকিৎসকদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া দিয়ে থাকেন। তবে স্বাস্থ্যকর ডায়েট ছাড়াও গর্ভবতী মায়েদের কিছু নির্দিষ্ট খাবার খাওয়া এড়ানো উচিত। চলুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় একজন মা কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন।
এ বিষয়ে আরও পড়ুন :
গর্ভবতী মা যেসব খাবার খাবেন না
অথবা গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার বর্জন করবেন
ক্যাফেইন
অনেকের মধ্যেই চা বা কফি খাওয়ার প্রবণতা আছে। স্ট্রেস কমাতে অনেকে এক কাপ চা বা কফি বেছে নেন। চেষ্টা করুন এই প্রবণতা কমানোর বা এর থেকে দূরে থাকার। অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরে গেলে মিসক্যারেজের সম্ভাবনা বা কম ওজনের শিশু হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
উচ্চ পারদযুক্ত মাছ
পারদ অত্যন্ত বিষাক্ত। গর্ভবতী মহিলাদের এক মাসে এক বা দুইবারের বেশি মাছ খাওয়া একদমই উচিত নয়। উচ্চ পারদযুক্ত মাছের মধ্যে টুনা, শার্ক, কিং ম্যাকারেল, সোর্ডফিশে, কিং ম্যাকেরেল এবং টাইল ফিশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
কাঁচা স্প্রাউটস
স্প্রাউটস খুব স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। তবে রান্না না করা স্প্রাউটস গর্ভবতী মহিলাদের পক্ষে ভাল নয়। কাঁচা স্প্রাউটস-এ সালমোনেলারমতো ব্যাকটিরিয়া থাকতে পারে। রান্না করার পরে এটা দূর হতে পারে। গর্ভবতী মহিলারা রান্না করা হলে তবেই এটি খান।
আনারস
আনারস আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি হলেও এর থেকে অন্তঃসত্ত্বাদের দূরে থাকাই ভাল, কারণ আনারসে উপস্থিত ব্রোমেলাইন নামের উৎসেচক গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্রসব হয়ে যেতে পারে। গর্ভধারণের প্রথম তিন মাস এই ফলটি না খাওয়াই ভালো। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে পারেন। তবে সব থেকে ভালো হয় যদি হবু মা গোটা প্রেগনেন্সি পিরিয়ডে আনারস থেকে দূরে থাকেন। অত্যাধিক আনারস খেলে ডায়রিয়া, ডিহাইড্রেশন হতে পারে।
অতিরিক্ত লবণাক্ত
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। কারণ এর ফলে উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি পায়ে পানি আসা বা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ফুলে যেতে পারে
আঙুর
গর্ভাবস্থায় যেকোনও ধরনের আঙুর এড়ানোই ভালো, সে সবুজ হোক বা কালো। আঙুরের মধ্যে থাকা রেজভেরট্রোল গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিষাক্ত হতে পারে। এছাড়া আঙুর আম্লিক প্রকৃতির হওয়ায় এটি গর্ভস্থ শিশু ও মায়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তেঁতুল
প্রেগনেন্সির সময় টকজাতীয় কিছু খেতে সব মায়েরই ভাল লাগে। তেঁতুলে থাকে ভিটামিন সি, যা প্রোজেস্টেরন উৎপাদনে বাধা দেয়। অন্তঃসত্ত্বার শরীরে প্রোজেস্টেরন কম থাকলে গর্ভপাত হতে পারে। তাই তেঁতুল থেকে প্রতিটি হবু মা দূরে থাকুন।
কাঁচা পেঁপে
গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেপে একেবারেই খাবেন না। কাঁচা পেপে খেলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্রসব হয়ে যেতে পারে। পেঁপেতে থাকা পেপ্সিন ও প্যাপাইন ভ্রূণের ক্ষতি করে। পেঁপে দেহের তাপমাত্রাও বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা গর্ভবতীদের জন্য ভাল নয়। আবার পেঁপের ল্যাটেক্স গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
আরও পড়ুন :

1 মন্তব্যসমূহ
ভালো পোস্ট https://www.tonbangla.com/2022/09/food-list-pregnant-women.html
উত্তরমুছুন