থাইরয়েড গলার সামনে অবস্থিত প্রজাপতি আকৃতির একটি গ্রন্থি। খাবার থেকে আয়োডিন নিয়ে থাইরয়েড হরমোন উত্পাদন করে। শরীরের হার্ট রেট, লিভার ফাংশন, সার্কুলেশন, মেটাবলিজম ও ইন্টারনাল ক্লক সহ প্রায় সকল কার্যক্রমে থাইরয়েড হরমোন সহযোগিতা করে।
থাইরয়েড রোগের কারণ
-আয়োডিনের অভাব
-গুইট্রোজেন ব্যবহার: এগুলি রাসায়নিক যা থাইরয়েড হরমোনের সংশ্লেষণকে বাধা দেয়।
-দীর্ঘস্থায়ী সহজ গলগণ্ড: ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে পারে
জেনেটিক সংবেদনশীলতা।
-অটোইমিউন: শরীর অ্যান্টিবডি তৈরি করে যা থাইরয়েডকে অত্যধিক উদ্দীপিত বা বাধা দেয় যা যথাক্রমে হাইপারথাইরয়েডিজম বা হাইপোথাইরয়েডিজম সৃষ্টি করে।
-বিরল কারণ: ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে বা অন্যান্য রোগের গৌণ।
-বিকিরণ এক্সপোজার।
আরও পড়ুন : কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধের উপায়
থাইরয়েডের লক্ষণ
ওজন পরিবর্তন
হঠাৎ করেই কোনও কারণ ছাড়া ওজন বেড়ে যাওয়াটা হাইপোথাইরয়েডিসমের কারণে হতে পারে। যদি খাওয়ার পরিমাণ না বাড়ানো সত্ত্বেও হঠাৎ করে ওজন পরিবর্তিত হয় তাহলে থাইরয়েড হরমোনের পরীক্ষা করানো উচিত। একই ভাবে যাদের হঠাৎ করেই বেশ খানিকটা ওজন কমে যায়, তাদেরও হাইপারথাইরয়েডিসম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
গলার স্ফীতি
থাইরয়েড হরমোনের অভাবে অর্থাৎ হাইপোথাইরয়েডিসমের কারণে গলা ফুলে উঠতে পারে। গলায় হাত দিয়ে কোনও অস্বাভাবিক ফোলা কিছু পেলে দ্রুত চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এ ছাড়াও থাইরয়েড হরমোনের অভাবে গলার স্বর কিছুটা কর্কশ বা গম্ভির হয়ে যেতে পারে।
অবসন্নতা
নিয়মিত শরীর অবসন্ন লাগার একটি অন্যতম কারণ হতে পারে হাইপোথাইরয়েডিসম। হাইপো থাইরয়েডিসম হল শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় কম থাইরয়েড হরমোন তৈরি হওয়া। সারা রাত পর্যাপ্ত ঘুমানোর পরেও যদি সকালে অবসন্ন লাগে অথবা সারা দিন ধরে ঝিমুনি আসে তাহলে থাইরয়েড হরমোন ঠিক মতো কাজ করছে কিনা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।
চুলের সমস্যা
হাইপোথাইরয়েডিসম হলে অতিরিক্ত চুল পড়া, চুলের বৃদ্ধি কমে যাওয়ার মতো একাধিক সমস্যা দেখা দেয়। থাইরয়েড হরমোনের স্বল্পতা বা আধিক্য, দুটিই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তবে সময় মতো সনাক্ত করতে পারলে নির্দিষ্ট মাত্রার অসুধ খেয়ে পুরোপুরি সুস্থ থাকা সম্ভব। তাই থাইরয়েড হরমোন সমস্যার কোনও লক্ষণ দেখা গেলে তা অবহেলা করে ফেলে না রেখে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ত্বকের উপর প্রভাব
হাইপোথাইরয়েডিসমের কারণে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। হাইপোথাইরয়েডিসমের কারণে ঘাম কম হয় এবং ত্বক তার প্রয়োজনীয় আদ্রর্তা পায় না। ফলে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায়। হাইপোথাইরয়েডিসমের রোগীদের মধ্যে নখ ভাঙ্গার বা নখে ফাটল ধরার প্রবণতাও বেশি।
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা
সারাক্ষণ অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা হাইপারথাইরয়েডিসম এর লক্ষণ হতে পারে। হাইপারথাইরয়েডিসম হল শরীরে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি থাইরয়েড হরমোন তৈরী হওয়া। সারাক্ষণ শরীরে অস্থির ভাব এবং বিশ্রামহীন বোধ হলে হাইপারথাইরয়েডিসমের সমস্যা আছে কিনা তা পরীক্ষা করানো দরকার।
আরও পড়ুন :স্তন ক্যান্সার : কারণ ও প্রতিকার
প্রকারভেদ অনুয়ায়ী থাইরয়েড রোগের চিকিৎসাঃ
থাইরয়েড রোগের প্রকারভেদ
১. Hypo Tyroidisom: থাইরয়েড হরমোন কমে গেলে তাকে বলা হয় হাইপো থাইরয়েডিজম।
২. Hyper Thyroidisom: থাইরয়েড হরমোন বৃদ্ধি পেলে তাকে বলা হয় হাইপার থাইরয়েডিজম।
হাইপো থাইরয়েড রোগের চিকিৎসাঃ
যখন হাইপো থাইরয়েড নিয়ে কোন রোগী ডাক্তারের কাছে যান সাধারণত তখন ডাক্তাররা রোগীকে একটা চার্ট পড়তে দেন। সেইটা পড়ার পর তারা রোগীদের চিকিৎসা শুরু করেন।
থাইরয়েডের চিকিৎসাতে ডোজের একটা বিষয় থাকে রোগী যদি বাচ্চা হয়ে থাকে, তাহলে চিকিৎসা হবে একরকম। আবার রোগী যদি পূর্ণ বয়স্ক হয়ে থাকে, তাহলে চিকিৎসা হবে আরেক রকম।
থাইরয়েডের চিকিৎসার সময় প্রেগন্যান্ট মহিলারা থাইরয়েড চিকিৎসা করাতে চান না। তারা প্রশ্ন করেন যে যেহেতু প্রেগন্যান্সি টাইমে যেকোন ঔষুধ বাচ্চা বা মায়ের ক্ষতি করতে পারে, তাই তারা ট্রিটমেন্ট করাতে চান না!
তাদের উদ্দেশ্যে ডাক্তারগণ বলে থাকেন, থাইরয়েড হরমোনের ক্ষেত্রে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। একজন মা সন্তান ধারণের পরে যদি থাইরয়েড হরমোনের চিকিৎসা না করায় তাহলে তাকে ৩০% ঔষুধের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
যদি তিনি ঔষধ ঠিক মতো না খান, তাহলে বাচ্চারও হরমোন জনিস সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি বাচ্চা বুদ্ধি প্রতিবন্ধীও হতে পারে।
তাই যখনই কোন মহিলা রোগী ডাক্তারের কাছে যান, ডাক্তাররা তাদের পরামর্শ দেন যে তার যদি বাচ্চা নেওয়ার প্লান থাকে। তাহলে তিনি কনসিভ করার সাথে সাথে যেন একজন হরমোন বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নেন।
থাইরয়েড হরমোনের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ঔষধ রয়েছে। এগুলো সেবনেরও আরও বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় রোগী সকাল বেলা উঠে ওষুধ খেয়ে অফিসে চলে গেলো। কিন্তু এটা নিয়ম না। নিয়ম হচ্ছে ওষুধ খেয়ে সর্বনিম্ন ২ ঘন্টা বিরতি দিতে হবে।
থাইরয়েড হরমোনের ওষুধ খাওয়ার পরে পরবর্তী দুই ঘন্টা আর কোনো কাজ বা ওষুধ খাওয়া যাবে না।
অনেকে বলে থাকেন যে তাদের সকাল বেলা অনেক কাজ থাকে, ঘুম থেকে উঠতে পারেন না।
তাদের উদ্দেশ্যে ডাক্তারগণ বলে থাকেন তারা সকালে ফজরের নামাজ পড়ে ওষুধ খেয়ে দুই ঘণ্টা বিরতি দিয়ে, তারপরে আবার অফিসে চলে যাবেন বা পরবর্তী কাজ করবেন।
এটাও কারো পক্ষে সম্ভব না হলে, তিনি রাতের বেলা ওষুধটা খেতে পারেন। ওষুধ খাওয়ার দুই ঘন্টা পরে তিনি অন্য ওষুধ খাবেন বা রাতের খাবার খাবেন।
অন্যান্য ঔষধ বা বিভিন্ন খাবার থাইরয়েড হরমোনের চিকিৎসার জন্য ঔষধের কার্যকারিতা নষ্ট করে দিতে পারে। তাই ঔষধ খাওয়ার এই নিয়ম।
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে যে থাইরয়েড হরমোনের ওষুধ গুলো তাকে সারাজীবন খেতে হবে নাকি, এক সময় বন্ধ করে দিতে হবে!
কারো কারো ক্ষেত্রে সারা জীবন ওষুধ খেতে হয়, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে একসময় গিয়ে বন্ধ করা যায়। তবে দুই ক্ষেত্রেই ডাক্তারের পরামর্শ জরুরি।
হাইপার থাইরয়েডের চিকিৎসা:
হাইপার থাইরয়েডের চিকিৎসায় অনেক ঔষধ ব্যবহার হয়ে থাকে। এক্ষেত্রেও অনেকেই প্রশ্ন করে থাকে যে কতদিন যাবত ওষুধ গুলো তাকে খেতে হবে।
ডাক্তাররা সাধারণত বলে থাকেন যদি কোন রোগী টানা দুই বছর এ রোগের চিকিৎসার ওষুধ নিয়ে থাকে, তাহলে এ রোগ থেকে নিরাময় পাওয়া যাবে।
এ রোগের চিকিৎসায় প্রথমদিকে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ঔষধ দেয়া হয়ে থাকে এবং ধীরে ধীরে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী তা কমানো হয়ে থাকে।
অনেক ক্ষেত্রেই এতেই রোগটি নিরাময় হয়ে থাকে। আবার অনেক ক্ষেত্রে সার্জারিরও প্রয়োজন হয়ে থাকে। আবার অনেক ক্ষেত্রে থেরাপিও দেওয়া হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন :
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়
সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণ
সূত্র: Explore Bogura
রেফারেন্সঃ
https://www.medscape.com/
viewarticle/580420 https://www.radiologyinfo.org/
en/info.cfm?pg=radioiodine https://www.mayoclinic.org/
diseases-conditions/ hyperthyroidism/symptoms- causes/syc-20373659 https://www.endocrineweb.com/
conditions/hyperthyroidism/ hyperthyroidism-overview- overactive-thyroid

0 মন্তব্যসমূহ