ডায়াবেটিসের কারণ ,লক্ষণ ও ডায়াবেটিসের চিকিৎসা--Health-

ডায়াবেটিসের কারণ ,লক্ষণ ও ডায়াবেটিসের চিকিৎসা


স্বাস্থ প্রতিবেদকঃ শরীর যখন রক্তের সব চিনিকে (গ্লুকোজ) ভাঙতে ব্যর্থ হয়, তখনই মানুষের শরীরের ডায়াবেটিস বাসা বাঁধে। একবার কেউ এই রোগে আক্রান্ত হলে সারা জীবনের জন্যে বয়ে বেড়াতে হয়।এই রোগের কারণে মানুষের হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক হতে পারে। এছাড়াও ডায়াবেটিসের কারণে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে, নষ্ট হয়ে যেতে পারে কিডনি এবং অনেক সময় শরীরের নিম্নাঙ্গ কেটেও ফেলতে হতে পারে। জীবন যাপনের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম নীতি মেনে চললে অনেক ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ 
টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস
অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। তখন রক্তের প্রবাহে গ্লুকোজ জমা হতে শুরু করে। বিজ্ঞানীরা এখনও বের করতে পারেন নি কী কারণে এরকমটা হয়। তবে তারা বিশ্বাস করেন যে এর পেছনে জিনগত কারণ থাকতে পারে। অথবা অগ্ন্যাশয়ে ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণে ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলো নষ্ট হয়ে গেলেও এমন হতে পারে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ১০ শতাংশ এই টাইপ ওয়ানে আক্রান্ত।

টাইপ টু ডায়াবেটিস
এই ধরনের ডায়াবেটিসে যারা আক্রান্ত তাদের অগ্ন্যাশয়ে যথেষ্ট ইনসুলিন উৎপন্ন হয় না অথবা এই হরমোনটি ঠিক মতো কাজ করে না।সাধারণত মধ্যবয়সী বা বৃদ্ধ ব্যক্তিরা টাইপ টু ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও যাদের ওজন বেশি এবং যাদেরকে বেশিরভাগ সময় বসে বসে কাজ করতে হয় তাদেরও এই ধরনের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ কিছু এলাকার লোকেরাও এই ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছে। তার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়া। সন্তানসম্ভবা হলে পরেও অনেক নারীর ডায়াবেটিস হতে পারে। তাদের দেহ থেকে যখন নিজের এবং সন্তানের জন্যে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন যথেষ্ট পরিমানে তৈরি হতে না পারে, তখনই তাদের ডায়াবেটিস হতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে ৬ থেকে ১৬ শতাংশ গর্ভবতী নারীর ডায়াবেটিস হতে পারে। ডায়েট, শরীর চর্চ্চা অথবা ইনসুলিন নেওয়ার মাধ্যমে তাদের শরীরে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা গেলে তাদের টাইপ টু ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।

ডায়াবেটিসের কারণ
শারিরিক ব্যায়াম না করা
টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার অন্যতম কারণ হল শারীরিকভাবে নিস্ক্রিয় থাকা অর্থাৎ ব্যায়াম না করা।

পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া
আমাদের দৈনন্দিন পরিশ্রমের পর পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ডায়াবেটিস বেড়ে যায়। ন্যাশনাল স্লিপ ফাউণ্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ঘুম কম হলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়।

মানসিক চাপ
যে সকল কারণে টাইপ টু ডায়াবেটিস হয় তার মধ্যে একটি হল অত্যধিক মানসিক চাপ। পারিবারিক জটিলতা, অতিরিক্ত কাজের চাপে থাকলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়।

সকালের নাস্তা না খাওয়া
সকালের নাস্তা দিনের খাবারের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব ডায়াবেটিস রোগী সকালের নাস্তা এড়িয়ে যান তাদের রক্ত শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়।

রাতে বেশি খাওয়া
গবেষণা বলছে, রাতে বেশি খাওয়া, খাবার পর পরই ঘুমাতে যাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়।

বিকল্প মিষ্টি
২০১৪ সালে ‘ন্যাচার’ জার্নাল একটি গবেষণা প্রকাশ করে। গবেষণায় বলা হয়, বাজারে যেসব জিরো ক্যালরি নামের বিকল্প চিনি পাওয়া যায় তার প্রায় সবগুলোতেই অতিরিক্ত সোডা পাওয়া গেছে যা রক্তে শর্করার পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেয়।

ফ্রাস্টফোড খাওয়ার অভ্যাস 
ফাস্টফোডে রয়েছে অনেক বেশি ফ্যাট, ক্যালরি, সোডিয়াম, কার্বোহাইড্রেট। যা দেহের সুগারের মাত্রা অনেক বেশি বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ করে অরেঞ্জ, সুইট অ্যান্ড সাওয়ার ধরণের খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর।

ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো
১) ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
২)তেষ্টা পাওয়া
৩)নিয়মিত খাওয়ার পরও ঘন ঘন খিদে
৪)শরীরের বিভিন্ন অংশের কাটাছেঁড়া সহজে সারে না
৫) খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া
৬)প্রচণ্ড পরিশ্রান্ত অনুভব করা
৭)চোখে ঝাপসা দেখা
৮)হাতে-পায়ে ব্যথা বা মাঝে মাঝে অবশ হয়ে যাওয়া

ডায়াবেটিসের চিকিৎসা 
ডায়াবেটিসের চিকিৎসাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। ১)খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ২) দুই ব্যায়াম ৩) ওষুধ।

যাঁরা প্রাথমিক পর্যায়ে আছেন, তাঁদের খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যায়াম করলে এই রোগ ভালো হয়ে যেতে পারে। আর ব্যায়ামের মধ্যে রয়েছে দ্রুত হাঁটা। অন্তত ১৫০ মিনিট প্রতি সপ্তাহে হাঁটতে হবে। সেটি ২০ মিনিট করে প্রতিদিন বা ৩০ মিনিট করে পাঁচ দিন হতে পারে। তবে একদিনের বেশি বন্ধ করা যাবে না।
ডায়াবেটিসের আধুনিক চিকিৎসা
ডায়াবেটিসে মেট্রোমিন-জাতীয় ওষুধ এখন বেশ কার্যকর। এ ধরনের ওষুধ ইনসুলিন রেজিসটেন্স পূরণ (কাভার) করে এবং লিভার থেকে গ্লুকোজ তৈরি হওয়া বন্ধ করে। এই ওষুধগুলো পথিকৃৎ বলে বিবেচিত হয়। তা ছাড়া আরো কিছু ওষুধ আছে, যাকে বলা হয় ইনক্রেটিনস। এই জাতীয়  ওষুধ  ইনক্রেটিন মায়ামিন নামে বাজারে আসছে। এগুলোও বেশ কার্যকরী ওষুধ। তা ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ইনসুলিন এখন বাজারে আছে। তবে অনেকের ধারণা, ইনসুলিন নেওয়া শুরু করলে অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে, এটি ঠিক নয়। কোন রোগীর জন্য কোন ইনসুলিন দিতে হবে, সেটি চিকিৎসক ঠিক করবেন।

আরও পড়ুনঃ 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ