স্বাস্থ্য ডেস্ক : মানবদেহকে সুস্থ রাখতে দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি, বৃদ্ধি, রক্ষানাবেক্ষণ ও অন্যান্য কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অতি প্রয়োজনীয় এবং স্বল্প পরিমাণে খাদ্যে উপস্থিত জৈব রাসায়নিক পদার্থকে ভিটামিন বলে। ভিটামিনের অভাবে দেহের ক্ষয়পূরণ বৃদ্ধিসাধন ও তাপ শক্তি উৎপাদন ইত্যাদি বিভিন্ন ক্রিয়াগুলো সুসম্পন্ন হতে পারেনা। বিজ্ঞানী ক্যাশিমির ফ্রাঙ্ক ১৯১২ সালে ভিটামিন আবিষ্কার করেন।
ভিটামিনের প্রকারভেদ
ভিটামিন দুই প্রকার:
১) স্নেহ জাতীয় পদার্থের দ্রবনীয় ভিটামিন,যেমন-ভিটামিন এ,ভিটামিন ডি,ভিটামিন ই এবং ভিটামিন কে।
২) পানিতে দ্রবনীয় ভিটামিন,যেমন-ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স এবং ভিটামিন সি।।
ভিটামিনের উৎস, কাজ ও অভাবজনিত রোগ:
ভিটামিন-এ
ভিটামিন এ এর কাজ
-দেহের বৃদ্ধি
-চোখের রেটিনার রড সেল উৎপন্ন করে নাইট ব্লাইন্ডনেস থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে।
-প্রাণীদেহের রোগের সংক্রামন প্রটেক্ট করে।
-গ্ল্যান্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ভিটামিন এ এর অভাবজনিত রোগঃ
১.ব্লাইন্ডনেস একমাত্র ভিটামিন।-এ এর অভাবে ঘটে।
২.মানবদেহের স্কিন, ভিটামিন এর অভাবে ব্যাং এর চামড়ার মত খসখসে হয়ে যায়।
৩.ওয়েট লস-এর প্রাদুর্ভাব ঘটে।
৪.বৃক্কে স্টোন তৈরি হয়।
৫.রোগ সংক্রামণের পাওয়ার রিডিউস হয়।
ভিটামিন এ এর উৎস
উদ্ভিদ উৎসঃ বাঁধাকপি, গাজর, সবুজ শাকসবজি, পেঁপে, পালং শাক, পাকা আম ইত্যাদি হল ভিটামিনের উদ্ভিজ্জ উৎস।
প্রাণিজ উৎসঃ কিছু কিছু মাছের যকৃত নিঃসৃত তেল যেমন হেলি বার্ড, হাঙ্গর ইত্যাদি, ডিমের কুসুম, দুধ, মাখন হল ভিটামিন এর প্রাণিজ উৎস।
ভিটামিন -ডি
ভিটামিন ডি এর কাজ
-শরীরে অস্থি গঠন করতে সাহায্য করে।
-ক্ষুদ্রান্তে, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস শোষণ, কেবলমাত্র ভিটামিন ডি, মানবদেহে করে থাকে।
-অস্তিতে ক্যালসিয়াম এর প্রাদুর্ভাব ঘটায়।
-রিকেট ও অস্টিওম্যালেসিয়া এই দুইটি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত রোগঃ
১. এই ভিটামিনের অভাবে শিশুদের রিকেট ও বয়স্কদের অস্টিওম্যালেসিয়া এই দুইটি রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে।
২. রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা রিডিউস করে।
৩. এর অভাবে ক্যারিস বা দন্ত ক্ষয় জনিত সমস্যা দেখা দেয়।
ভিটামিন ডি এর উৎস
ভিটামিনের উৎসঃউদ্ভিদ উৎসঃ বাঁধাকপি, গাজর, সবুজ শাকসবজি, পেঁপে, পালং শাক, পাকা আম ইত্যাদি হল ভিটামিনের উদ্ভিজ্জ উৎস।
প্রাণিজ উৎসঃ কিছু কিছু মাছের যকৃত নিঃসৃত তেল যেমন হেলি বার্ড, হাঙ্গর ইত্যাদি, ডিমের কুসুম, দুধ, মাখন হল ভিটামিন এর প্রাণিজ উৎস। এছাড়া মানবদেহের স্কিনে অতিবেগুনি রশ্মি দ্বারা ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয়।
ভিটামিন -ই
ভিটামিন ই এর কাজ
-ভিটামিন ই মাতৃদুগ্ধ স্বাভাবিকভাবে নিঃসরণ করতে সহায়তা করে।
-ব্লাইন্ডনেস দূর করে।
-ইউট্রাস এ ভ্রূণের বৃদ্ধি ঠিকঠাক রাখে।
-গর্ভপাত বন্ধ করতে সহায়তা করে।
আরও পড়ুন:
ভিটামিন ই এর জন্য অভাবজনিত রোগঃ
১. এই ভিটামিনের অভাবে প্রজনন ক্ষমতা স্লথ করে।
২. ইউট্রাস-এ ভ্রূণের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
৩.মাতৃদুগ্ধের প্রোডাকশন স্লো করে।
ভিটামিন ই এর উৎস:
উদ্ভিদ উৎসঃ সবুজ শাকসবজি, লেটুস শাক বা অঙ্কুরিত ছোলা উদ্ভিদের ভিটামিন ই এর উৎস।
প্রাণিজ উৎসঃ ডিমের কুসুম, দুধ, মাখন হল ভিটামিন এর প্রাণিজ উৎস।
ভিটামিন -কে
ভিটামিন কে এর কাজঃ
-শরীরের রক্ত তঞ্চন রোধে ভিটামিন-কে মূল ভূমিকা পালন করে।
- ব্লাডে প্রথ্রবিন-এর পরিমাণ ন্যাচারাল রাখে।
ভিটামিন কে এর অভাবজনিত রোগঃ
১. ভিটামিন কে এর অভাবেরক্ত তঞ্চন ঘটে
২. ব্লাডে প্রথ্রবিন, কমে যায়।
ভিটামিন-কে এর উৎস
উদ্ভিদ উৎসঃ আলফা শাক, পালং শাক, বাঁধাকপি, টমেটো ইত্যাদি ভিটামিন কে এর উদ্ভিদ উৎস।
প্রাণিজ উৎসঃদুধ, মাখন, যকৃত, ডিমের কুসুম হল ভিটামিন-কে এর প্রাণিজ উৎস।
ভিটামিন-বি
ভিটামিন-বি ওয়ান টু, থ্রি, ফোর, ফাইভ, সিক্স এবং ভিটামিন টুয়েলভ এর সংমিশ্রণ হলো ভিটামিন বি কমপ্লেক্স।
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর কাজঃ
-মানব দেহের বৃদ্ধি কে স্বাভাবিক রাখে।
-রক্তাল্পতা, প্লেলেগ্রা ইত্যাদি রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে।
-স্নায়ু কোষ বা ব্রেন স্থির রাখে।
ভিটামিন-বি এর অভাবজনিত রোগঃ
১. বেরিবেরি রোগ একমাত্র ভিটামিন-বি ওয়ান এর অভাবে ঘটে থাকে।
২. জিভে ঘা এবং মুখে ঘা এর মত রোগ গুলি ভিটামিন-বি এর অভাবে ঘটে।
৩. ভিটামিন-বি টুয়েলভ এর অভাব জনিত কারণে অ্যানিমিয়া হয়।
৪.এছাড়া ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর অভাবে চুল উঠে যাওয়া, খিদে না পাওয়া বা স্নায়ু দুর্বলতা প্রভৃতি রোগ ঘটে থাকে।
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স-এর উৎসঃ
উদ্ভিদ উৎসঃ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সাধারণতঃ লাল আটা, সবুজ শাকসবজি, ভাতের ফ্যান, টমেটো, ইস্ট, অঙ্কুরিত ছোলা ইত্যাদির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
প্রাণিজ উৎসঃ দুধ, মাখন, যকৃত, ডিমের কুসুম ইত্যাদি হলো ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর প্রাণিজ উৎস।
ভিটামিন -পি
উদ্ভিদ-ভিত্তিক পদার্থের একটি গ্রুপকে আমরা এখন বায়োফ্ল্যাভোনয়েডস হিসাবে জানি যখন আপনি রঙিন উদ্ভিদ জাতীয় খাবারের সাথে সালাদ খাচ্ছেন, আপনি ভিটামিন পি এর একটি ডোজ পেয়ে যাচ্ছেন।
ভিটামিন পি এর কাজঃ
একচুয়ালি ভিটামিন পি এর নিজস্ব কোন কাজ নেই। এই গোত্রের ভিটামিন কেবলমাত্র ভিটামিন সি এর কার্যকারিতা গুলিকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। আর এই কারনেই এর কার্যকারিতা এবং অভাবজনিত লক্ষণগুলি ভিটামিন সি এর অনুরূপ।
ভিটামিন পি এর উপকার
ফ্ল্যাভোনয়েডগুলি বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা দেয় এবং হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে বলে মনে করা হয়।
ভিটামিন পি এর উৎস
সাইট্রাস ফল যেমন কমলা, লেবু ও ব্ল্যাকবেরি, স্ট্রবেরি এবং ব্লুবেরি যেমন লাল এবং নীল ফলগুলি ফ্ল্যাভ্যানোলের একটি চমৎকার উৎস যা এনথোকিয়ানিন নামে পরিচিত।
ভিটামিন -সি
ভিটামিন সি এর কাজ:
-স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধকারী ভিটামিন-সি দাঁতের মাড়ি সুস্থ রাখে।
-রেড ব্লাড এবং অনুচক্রিকা প্রোডাকশনে ভিটামিন সি এর জুড়ি মেলা ভার।
-দেহে অবস্থিত বিভিন্ন কলাকৌশল জারন-বিজারন এর কাজ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
-ক্ষতস্থান নিরাময়ে এবং রোগ প্রতিরোধ করে শরীরকে সুস্থ রাখে।
ভিটামিন সি এর অভাব জনিত রোগের লক্ষণ:
১. স্কার্ভি রোগ একমাত্র ভিটামিন সি এর অভাব এর ফলে কি ঘটে থাকে।
২. অ্যানিমিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে।
৩. হাড় এবং দাঁতের ক্ষয় এর মতো দুরারোগ্য ব্যাধির অর্থ শরীরে ভিটামিন সি এর অভাব।
ভিটামিন সি এর উৎসঃ
উদ্ভিজ্জ উৎসঃ পাতিলেবু, কাঁচা লঙ্কা, টমেটো, আমলকি প্রভৃতি সমস্ত টক জাতীয় ফল এর মধ্যেই ভিটামিন সি এর আধিক্য লক্ষ্য করা যায়।
প্রাণিজ উৎসঃ মাছ, মাংস, গরুর দুধ এবং মাতৃদুগ্ধে ভিটামিন সি এর আধিক্য পরিলক্ষিত হয়।
আরও পড়ুন:
0 মন্তব্যসমূহ