কিডনিতে পাথরের চিকিৎসা ; কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ ও লক্ষণ ; কিডনিতে পাথর প্রতিরোধের উপায়

কিডনিতে পাথরের চিকিৎসা ; কিডনি পাথর হওয়ার কারণ ও লক্ষণ ; কিডনিতে পাথর প্রতিরোধের উপায়

স্বাস্থ্য ডেস্ক : কিডনি হচ্ছে মানবদেহের রক্ত পরিশোধনের অঙ্গ । শরীরে জমে থাকা বর্জ্য পরিশোধিত হয় এই কিডনির মাধ্যমে। বাংলাদেশ  কিডনি রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর মধ্যে বড় একটি রোগ হলো কিডনিতে পাথর।

কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ:

১) কিডনিতে বারবার সংক্রমণ এবং যথোপযুক্ত চিকিৎসা না করা।

২) দৈনিক অল্প পানি পান।

৩) খাবারে অধিক লবণ।

৪) কম ফলফলাদি ও শাকসবজি খাওয়া।

৫) বেশি লাল মাংস যেমন-গরু ও খাসির মাংস এবং পোলট্রির মাংস খাওয়া কিডনিতে পাথর হওয়ার অন্যতম কারণ।

৬) বেশি বা খুব কম ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া।

৭) যারা ক্যালসিয়াম জাতীয় ট্যাবলেট প্রচুর পরিমাণে খায় এদেরও পাথর হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

৮) যেসব লোকের ইনফ্লামেটরি বাওয়েল রোগ থাকে, তারা কিডনির রোগ হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।

৯) টপিরামেট জাতীয় (এটা টোপাম্যাক্স হিসেবে পাওয়া যায়) ওষুধ কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এগুলো সাধারণত মাইগ্রেনের রোগে ব্যবহার করা হয়।

১০) অতিরিক্ত অক্সালেট জাতীয় শাকসবজি যেমন, পুঁই শাক, পালং শাক, বিট ইত্যাদি বেশি পরিমাণে খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে পরিমিত পরিমাণে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

১১) অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ অথবা বাতের ব্যথা কিংবা মূত্রাশয়ে প্রদাহের উপযুক্ত চিকিৎসা না করলে কিডনিতে পাথর হতে পারে।

কিডনিতে পাথর হওয়ার লক্ষণ :

কিডনিতে পাথর হওয়ার উপসর্গ : 

*কোমরের পেছন দিকে ব্যথা হওয়া। এ ব্যথা তীব্র তবে সাধারণত খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। 

*ব্যথা কিডনির অবস্থান থেকে তলপেটেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

*রক্তবর্ণের প্রস্রাব।

*বমি বমি ভাব। অনেক সময় বমিও হতে পারে।

কিডনির পাথর প্রতিরোধের উপায়:

খাদ্যাভ্যাসের কিছু পরিবর্তন ও পর্যাপ্ত পানি পান করা কিডনি পাথর প্রতিরোধের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিডনির পাথর বের করলেও আবার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই যাঁদের একবার পাথর হয়েছে, তাঁদের জন্য কিছু পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

* সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ হলো পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে যাতে শরীর শুষ্ক না থাকে। কতটুকু পানি আপনার জন্য পর্যাপ্ত, তা নির্ভর করে আপনার কাজের ধরন, অবস্থান ও জলবায়ুর ওপর। যাঁরা বাইরে মাঠে কাজ করেন তাঁদের শরীরে পানির প্রয়োজন নিশ্চিতভাবে ঘরে এসির ভেতর অবস্থানরত মানুষের চেয়ে বেশি। তেমনি গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে বা গ্রীষ্মকালে, শীতপ্রধান অঞ্চলে বা শীতকালে পানির প্রয়োজন বেশি হবে। যাঁদের আগে পাথর হয়েছে তাঁদের বেলায় সাধারণত আমরা বলি এমন পরিমাণ পানি ও তরল পান করবেন, যাতে প্রস্রাব ২৪ ঘণ্টায় ২ লিটারের মতো হয় অথবা প্রস্রাব উচ্চবর্ণের না হয়। এটি দেখতে যেন অনেকটা পানির মতোই হয়। আপনার অবস্থানভেদে ২-৪ লিটার পান করার প্রয়োজন হতে পারে।

* কোনো অসুখের কারণে প্রস্রাব প্রবাহে বাধা অথবা সংক্রমণ থাকলে তার চিকিৎসা করতে হবে।

* খাদ্যে লবণের পরিমাণ কমাতে হবে।

* মূত্রতন্ত্র বা কিডনি থেকে পাথর বের করার পর আমরা পাথরের রাসায়নিক পরীক্ষা করে থাকি। ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথরের ক্ষেত্রে যেসব খাদ্যে অক্সালেট বেশি থাকে তা কম খেতে হবে। যেমন, পালংশাক, স্ট্রবেরি, মাখন, চকলেট, দুগ্ধজাতীয় খাবার। প্রস্রাবে সাইট্রেট কম থাকলে পটাশিয়াম সাইট্রেট খেতে দেওয়া যেতে পারে। এটি প্রস্রাবে অ্যাসিডোসিস কমায়। অজ্ঞাত কারণে প্রস্রাবে ক্যালসিয়াম বেড়ে গেলে মূত্রবর্ধক থায়াজাইডজাতীয় ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। ইউরিক অ্যাসিড থেকে পাথর হলে লাল মাংস খাওয়া কমাতে হবে; অ্যালোপিউরিনল ওষুধ অনেক ক্ষেত্রে দেওয়া যেতে পারে।

* মেটাবলিক সমস্যার জন্য পাথর হলে তার চিকিৎসা করতে হবে। প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির অতিরিক্ত কার্যকারিতা বা টিউমার থাকলে তার শল্যচিকিৎসা করাতে হবে।

* অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন সি (যা শরীরে অক্সালেটে পরিণত হয়) ও ভিটামিন ডি (শরীরের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বাড়ায়) খাওয়া পরিহার করতে হবে। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন শরীরের জন্য ভালো।

কিডনিতে পাথরের চিকিৎসা

অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাটাছেঁড়া না করেই কিডনির পাথরের চিকিৎসা সম্ভব। রোগীকে প্রচুর পানি পান করিয়ে এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে কিছু পাথর শরীর থেকে বের করা সম্ভব। এ ছাড়া অন্যান্য পাথর আধুনিক পদ্ধতিতে বিচূর্ণ করা হয়। তারপর তা প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে আসে। খুব কম ক্ষেত্রেই আজকাল অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।

আরও পড়ুন :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ