হেপাটাইটিস বি ভাইরাস কি?
হেপাটাইটিস বি (HBV) একটি সংক্রামক রোগ। এটি কখনও কখনও ব্যাকটেরিয়া এবং ঔষধের খারাপ ফলাফলের কারণেও হতে পারে। হেপাটাইটিস বি ভাইরাস লিভার কে সরাসরি আক্রমণ করে এবং এর সংক্রমণে আক্রান্ত ব্যাক্তির লিভার সম্পুর্ণ খারাপ হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশে প্রায় ৬৬ লাখ মানুষ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত এবং এর কারণে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
ঢাকার রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সংবাদ মাধ্যম বিবিসিকে বলেন,হেপাটাইটিসের যে ৫ রকম ভাইরাস আছে তার সবগুলোর সংক্রমণই বাংলাদেশে আছে। এ বছরও চট্টগ্রামে হেপাটাইটিস ই ভাইরাসের একটি প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে এবং এখন পর্যন্ত তিনজন মারা গেছে।"হেপাটাইটিসের পাঁচ রকমের ভাইরাসেরই রোগী আমাদের দেশে আছে। ই ভাইরাসেই সবচে বেশি মানুষ ভোগে। আমাদের দেশে যদি কোনো প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় সেটা মূলত ই ভাইরাসের আউট ব্রেক হয়। কারণ এটা ছড়ায় বেশি। ই ভাইরাস মূলত পানির মাধ্যমে ছড়ায়। এবং গত দুই-তিন বছরে আমরা প্রতিবছর একটা ই ভাইরাসের আউট ব্রেক দেখতে পাচ্ছি।"
হেপাটাইটিস বি ভাইরাস হওয়ার কারণ
-অরক্ষিত যৌনমিলনের সময়ে।
-একান্ত ব্যক্তিগত সরঞ্জাম, যেমন: রেজর, টুথব্রাশ বা নেইল কাটার ভাগাভাগি করে ব্যবহার করলে।
-একই সিরিঞ্জ জীবাণুমুক্ত না করে অনেকে ব্যবহার করলে।
-হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত মায়ের থেকে সন্তান জন্মদানের সময়।
-প্রসবের সময়, সংক্রামিত মায়ের থেকে তার শিশুর হেপাটাইটিস হতে পারে।
-রক্ত এবং যেকোনো ধরনের শরীরের তরল, যেমন: লালা, বীর্য রস প্রভৃতির মাধ্যমে।
-শরীরে ট্যাটু করলে।
আরো পড়ুন: কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধের উপায়
হেপাটাইটিস বি ভাইরাস হওয়ার লক্ষণ
১)বোমি ভাব ও পেটে ব্যাথা।
২)অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভাব করা।
৩)লাল ও গাঢ় রঙের প্রস্রাব ।
৪)ত্বক ও চোখ হলদে হয়ে যাওয়া ।
৫)দীর্ঘস্থায়ী জ্বর।
৬)মাথা ব্যথা।
৭)শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকানি
৮)খাওয়ায় অরুচি।
৯)মাথাব্যথা।
১০)ডায়রিয়া।
১১)পেটব্যথা।
১২) গিঁঠে ব্যথা।
হেপাটাইটিস বি ভাইরাস নির্ণয়:
উপরোক্ত উপসর্গ গুলো দেখে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে থাকেন। রক্তের HBsAg পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়। এছাড়াও উপসর্গ দেখে, লিভারের Ultra Sound, HBsAg, SGOT, ALT, BILLIRUBIN , AST CT Scan ,Andoscopy ইত্যাদির মাধ্যমেও হেপাটাইটিস বি ভাইরাস রোগ নির্ণয় করা হয়।
আরো পড়ুন: যৌন মিললের ইসলামিক নিয়ম
হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের চিকিৎসা:
হেপাটাইটিস ‘বি’ এর শতভাগ সফল চিকিৎসা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি, অনেক ক্ষেত্রে নতুন উদ্ভাবিত ঔষধ গুলো ভাল ফল দিছে বলে গবেষকরা দাবি করলেও আপাত কোনও বিশ্বস্ত ঔষধ বাজারে আসেনি। হেপাটাইটিস ‘বি’ আক্রান্তের চিকিৎসা শুরু করবার আগে যেটা নিশ্চিত হতে হয় তা হল ভাইরাসের DNA (পরিমাণ ও ধরন) পরীক্ষা। DNA পরীক্ষা যদি পজিটিভ হয় তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিশ্চিত হয়ে নেন আক্রান্ত রোগীর Portal Hypertension অথবা অন্য কোন জটিলতা আছে কিনা। তার ফাইব্রোসিস পরিবর্তন বা সিরোসিস হয়েছে কিনা, এসোফেগাল ভ্যারিক্স (গলবিলের নিচের অংশে এক ধরনের রক্ত-বাহিত শিরা)এ কোনো পরিবর্তন এসেছে কিনা। সাধারণত লিভার এর পরিবর্তনের (সিরোসিস) সাথে সাথে এসোফেগাল ভেরিক্স গুলো বদলে যায়। রক্তের ক্রমাগত চাপে এই ভ্যারিক্স গুলো ছিঁড়ে গিয়ে রোগীর নাক-মুখ দিয়ে রক্তপাত ঘটতে পারে, এবং রোগীর মৃত্যু হতে পারে। উন্নত বিশ্বে ভ্যারিক্স চিকিৎসায় এক ধরনের কৃত্রিম রক্তনালী (Steosis) তৈরি করে লিভারের অকার্যকর অংশ থেকে রক্তনালী সরাসরি ভ্যারিক্স এ প্রবাহিত করা হয়। বিকল্প হিসেবে আমাদের দেশে EVL বা এসোফেগাল ভ্যারিক্স লাইগেশন পদ্ধতি চালু আছে। তুলনামূলক ভাবে যার খরচ অত্যন্ত কম। মাত্র ১০/১২ হাজার টাকায় ৩/৪ টি ভ্যারিক্স লাইগেশন করা সম্ভব। এরপর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর ডায়াবেটিক বা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা জেনে নিয়ে রোগীর জন্য থেরাপি নির্ধারণ করবেন।
হেপাটাইটিস ‘বি’ এর চিকিৎসায় এখন খাবার ট্যাবলেট বেরিয়েছে যা খুব বেশি ব্যয় বহুল নয়। কার্যকর চিকিৎসা হলো ইন্টারফেরন, পেগালিটেড ইন্টারফেরন আলফা ২-বি বা পেগাসিস। সাথে মুখে খাবার ঔষধ ল্যামিভুডিন, এডিফোভির আর সর্বশেষ সংযোজন টেলবিভুডিন ইত্যাদি। উন্নত চিকিৎসার আশায় আজকাল অনেকেই বাংলাদেশ ছেড়ে ব্যাংকক,ভারত কিম্বা থাইল্যান্ডে যান। আসলে আমাদের দেশে অণুজীব বিজ্ঞান গবেষণা এবং এ ধরনের রোগ নির্ণয়ের যে সমস্ত ল্যাবরেটরি আছে তা মান সম্মত নয় বিধায় অনেক রোগীকে তার PCR পরীক্ষার জন্য রক্ত ভারত-সিঙ্গাপুর প্রেরণ করতে হয়। বাংলাদেশে বিভিন্ন ল্যাব এই টেস্টগুলো করছে তবে মোটেও নির্ভুল পরীক্ষা করতে পারছেনা। আমাদের দেশের আলট্রা-সাউন্ড মেশিনগুলোর মান কিম্বা সনো-লজিস্টদের দক্ষতা এতই কম যে তারা সঠিক ভাবে রোগ নিরূপণ করতে পারেনা। তারপরেও বর্তমানে বাংলাদেশে হেপাটাইটিস ‘বি’ এর চিকিৎসায় ডাক্তারগণ পাশ্চাত্যের তুলনায় ভালো ফল পাচ্ছেন।
সুত্র: BBC BANGLA, PRIYO.COM
আরো পড়ুন:

0 মন্তব্যসমূহ