স্বাস্থ্য ডেস্ক : বর্তমানে বিশ্বে ৪০ থেকে ৫০ ভাগ মানুষ কোনো না কোনো সময় মেরুদণ্ডের ব্যথায় ভোগেন। মেরুদণ্ডের আশেপাশের পেশি ও লিগামেন্টে টান পড়া, অধিক সময় ধরে মেরুদণ্ডে চাপ পড়ে এমন কাজে করা,হঠাৎ কোন ভারী ওজন ওঠানো,দুর্বল পেশি এবং নিয়মিয় শরীরচর্চার কারণ মেরুদণ্ডে যন্ত্রণাদায়ক ব্যথার করে। মেরুদণ্ডের ব্যথার কারণ ১) আপনি কি সারা দিন এক জায়গায় বসে কাজ করেন? দীর্ঘদিন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা এ ভাবে কাজ করতে হলে শিরদাঁড়া বা মেরুদণ্ডের সমস্যা হতেই পারে। ২) যদি দীর্ঘদিন, নিয়মিত মাত্রাতিরিক্ত কাজের চাপে পর্যাপ্ত বিশ্রাম না হয়, সে ক্ষেত্রে মেরুদণ্ডের সমস্যা হতে পারে। ৩) খুব ভারি ব্যাগ (যেমন, ল্যাপটপ ব্যাগ, বইয়ের ব্যাগ বা অন্যান্ত ভারি জিনিসপত্র) নিয়মিত পিঠে নিলে কাঁধে আর পিঠে অতিরিক্ত চাপ পড়ে মেরুদণ্ডে সমস্যা দেখা দিতে পারে। ৪) ঘুমানোর সময় অনেকেই অদ্ভুত ভঙ্গিতে শুয়ে থাকেন। অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে পিঠ, কোমর বেঁকিয়ে শোওয়ার অভ্যাস মেরুদণ্ডের ক্ষতি করে। ৫) পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাবে যেমন শিরদাঁড়ার সমস্যা হতে পারে, তেমনই অতিরিক্ত বিশ্রাম, আলস্যের ফলেও মেরুদণ্ডের সমস্যা হতে পারে। ৬) নিয়মিত হাই হিল পরার অভ্যাস বা শক্ত জুতো পরার অভ্যাস মেরুদণ্ডে অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি করে। এর থেকে পরবর্তীকালে মেরুদণ্ডে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। ৭) দীর্ঘক্ষণ ঝুঁকে বসে মোবাইলে চ্যাট বা ল্যাপটপে ব্যাস্ত থাকলে মেরুদণ্ডে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। পরবর্তীকালে এর ফলে মেরুদণ্ডে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। ৮) আচমকা খুব ভারী কোনও জিনিস তোলার চেষ্টায় টান পড়ে মেরুদণ্ডে চোট লাগতে পারে। ৯) দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি বা বাইকে ড্রাইভ করলে মেরুদণ্ডের সমস্যা হতে পারে। ১০) খুব শক্ত, অসমান বিছানায় দীর্ঘদিন ধরে শুলে মেরুদণ্ডের সমস্যা হতে পারে। মেরুদণ্ডের ব্যথার লক্ষণ মেরুদণ্ডের সমস্যায় ঘাড়ে যে সব লক্ষণ দেখা দেয়, সেগুলো হলো- দাঁড়ানো বা বসা অবস্থায় ঘাড়ে ব্যথা অনুভূত হওয়া, ঘাড় থেকে উৎপন্ন ব্যথা হাতে ছড়িয়ে পড়া, প্রাথমিক পর্যায়ে কাঁধ ও হাতে ব্যথা, হাতের বিভিন্ন অংশে ঝিনঝিন, শিন শিন করা, হাতের বোধশক্তি কমে আসা, পর্যায়ক্রমে হাতের অসারতা, ধীরে ধীরে হাত দুর্বল হয়ে হাতের কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে পঙ্গুত্ব বরণ করা। মেরুদণ্ডের পিঠের অংশে ব্যথার লক্ষণের মধ্যে রয়েছে- বসা ও দাঁড়ানো অবস্থায় পিঠে ব্যথা এবং পিঠ থেকে বুকের চারপাশে ব্যথা ছড়িয়ে পড়া। আর কোমরের দিকের মেরুদণ্ডেরে ব্যথার লক্ষণগুলো হলো- দাঁড়ানো বা বসা অবস্থায় কোমর ব্যথা অনুভূত হওয়া, কোমর থেকে উৎপন্ন ব্যথা পায়ে ছড়িয়ে পড়া, নিতম্ব ও পায়ের মাংসপেশীতে ব্যথা, পায়ের বিভিন্ন অংশে ঝিনঝিন শিন শিন করা, পায়ের বোধশক্তি কমে আসা, পর্যায়ক্রমে পায়ের অসারতা, ধীরে ধীরে পা দুর্বল হয়ে কার্যক্ষমতা হারানো এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে পঙ্গুত্ব বরণ। মেরুদণ্ডে ব্যথার চিকিৎসা মনে রাখতে হবে, দীর্ঘমেয়াদী রোগ যন্ত্রনায় রোগীরা সাধারণত ব্যথানাশক বা Pain Killer ঔষধের উপর নির্ভর করে সাময়িক ব্যথা মুক্তির চেষ্টা করেন। নিয়মিত ব্যথানাশক খাওয়ার ফলে কিডনী বিকল হয়ে যাওয়ার ঝুকি অনেক বেড়ে যায়। তাই ঘাড়, পিঠ ও কোমর ব্যথায় অবহেলা না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা প্রয়োজন। পিঠের ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় -ভিটামিন ডির অভাবে পিঠের ব্যথা হয়। তাই শরীরে একটু রোদ লাগাতে হবে। কারণ, ভিটামিন ডি হলো ‘সৌর’ ভিটামিন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৫ থেকে ৫২ বছর বয়সীদের মধ্যে যাঁরা দীর্ঘস্থায়ী পিঠের ব্যথায় ভুগছেন, তাঁদের ৮০ শতাংশের এই ভিটামিনের অভাব রয়েছে। - কিছু খাবার পিঠের ব্যথা কমায়,তাই খাদ্যতালিকায় নজর দিয়ে ওগুলো বেশি বেশি খেতে হবে। আবার কিছু খাবার পিঠের ব্যথা বাড়ায়, ওগুলো বাদ দেওয়াই ভালো। কিছু সামুদ্রিক মাছ খেলে উপকার পাওয়া যায়। সয়া শস্যজাত খাবার, তিসি, বাদাম, সবুজ চা, আদা, চেরি ফল প্রভৃতি পিঠের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। দিনের খাদ্যতালিকায় এসব রাখলে ব্যথার উপশম হয়। অন্যদিকে প্রক্রিয়াজাত (প্রসেসড), ভাজাপোড়া খাবার, মার্জারিন নামে পরিচিত প্রাণিজ ও উদ্ভিদের চর্বি থেকে তৈরি মাখন, অতিরিক্ত মাত্রায় সম্পৃক্ত চর্বি ও ট্রান্সফ্যাটের খাবার পিঠের ব্যথা বাড়ায়। এগুলো ওজন বাড়ায় এবং হার্টের জন্যও ক্ষতিকর। -প্যান্টের পেছনের পকেটে পেট ফোলা মানিব্যাগ নিয়ে সারা দিন অফিসের চেয়ারে বসে কাটালে পিঠের ব্যথা হতে পারে। কারণ, এটা মেরুদণ্ডে খোঁচা দেয় এবং নিতম্বের গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ুতে চাপ দেয়। এর ফলে ওই স্নায়ুর প্রদাহ হতে পারে। ছেলেদের এই সমস্যা এত বেশি যে এ ধরনের ব্যথা মানিব্যাগ নিউরোপ্যাথি নামে পরিচিতি পেয়েছে। তাই মোটা মানিব্যাগ পিঠের শত্রু! একে যথা সম্ভব কৃশকায় রাখতে হবে। -অফিসে কাজের সময় পায়ের নিচে একটি ছোট পিঁড়ি রাখলে সুফল আসে। ব্যথা সারে। হাঁটু যেন নিতম্বের অনুভূমিক তলের একটু ওপরে থাকে, সেটা দেখতে হবে। এতে পিঠের নিচের দিকে চাপ কমে এবং পিঠের ব্যথার উপশম হয়। -প্যারাসিটামল বা এই জাতীয় ব্যথার ওষুধের চেয়ে গরম সেঁক বেশি উপকারী। গরম পানির ব্যাগ পিঠ বা কোমরের সংস্পর্শে রেখে রাতে ঘুমালে বেশ আরাম পাওয়া যায়। একধরনের গরম সেঁক দেওয়ার ব্যাগ কোমরে-পিঠে বেঁধে রাখা যায়। ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার গরম সেঁক আট ঘণ্টা প্রয়োগ করলে দীর্ঘস্থায়ী উপকার পাওয়া যায়। আরও পড়ুন: |
0 মন্তব্যসমূহ