মাসিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণ,লক্ষণ ও চিকিৎসা । Period ।

মাসিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণ,লক্ষণ ও চিকিৎসা  । Period ।

স্বাস্থ ডেস্কঃ প্রতিমাসে হরমোনের প্রভাবে মেয়েদের যোনিপথ দিয়ে যে রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত তরল পদার্থ বের হয়ে আসে তাকে মাসিক বা ঋতুস্রাব বলে।মাসিকের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে জড়িয়ে আছে নারীর সারাজীবনের প্রজনন স্বাস্থ্য এবং স্বাভাবিক সুস্থতা। মাসিকের মাধ্যমেই একজন নারী সন্তান জন্মদানের প্রাথমিক সক্ষমতা অর্জন করে। সাধারণত ৯ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে মেয়েদের প্রথম মাসিক শুরু হয়। তবে মেয়েদের বা নারীদের নিজস্ব শারীরিক গঠন ও হরমোনের প্রভাবে এই মাসিক শুরু হওয়ার সময়টি তারতম্য হয়ে থাকে।

মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ার কারণসমূহ:
-হরমোনের অসামঞ্জস্যতা বা ভারসাম্যহীনতা

-গর্ভধারণজনিত অনিয়মিত পিরিয়ড

- গর্ভনিরোধ বড়ি খাওয়ার ফলে অনিয়মিত পিরিয়ড

-মানসিক চাপের কারণেও হতে পারে।

- জরায়ুর টিউমার এর ফলে হতে পারে।

-জরায়ুতে জন্ম নিয়ন্ত্রণকারী ডিভাইস

-জরায়ুতে পলিপ হলে হতে পারে।

-এডেনোমায়োসিস (Adenomyosis)

-জরায়ু মুখে ক্যান্সার হওয়ার কারণ 

-জরায়ু, ডিম্বাশয় অথবা জরায়ু মুখে ক্যান্সার হলে।

-ওষুধের সাইড ইফেক্ট থেকেও হতে পারে।

-বংশগতভাবে রক্তের রোগের ইতিহাস থাকলে।

পিরিয়ডে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের লক্ষণ
বা মাসিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের লক্ষণ

১)মাসে দুই থেকে তিনবার পিরিয়ড হতে পারে।
২)অনেক দিন ধরে চলতে পারে।
৩)মাসিক শুরু হওয়ার এক থেকে দুদিন পরই শেষ হয়ে যায় এবং কয়েক দিন পর আবার শুরু হয়।
৪)প্রতি এক অথবা দুই ঘণ্টায় ন্যাপকিন একাধিকবার বদলাতে হয়।
৫)আগে নিয়মিত হলেও এখন অনিয়মিত।
৬)রাতে ঘুমের সময় স্যানিটারি প্যাড পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে।
৭)মাসিকের রক্তের সঙ্গে রক্তের বড় চাকা গেলে।
৮)ক্লান্তি, অবসাদ অনুভব অথবা শ্বাসকষ্ট হয়।

ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে করণীয়
বা মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে চিকিৎসা 

মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছে বলে মনে হলেই সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তার সঠিকভাবে রোগের ইতিহাস জেনে গাইনি পরীক্ষা, আলট্রাসনোগ্রাফি, রক্তের জমাটবাঁধার ক্ষমতা পরীক্ষা, রক্তের রুটিন পরীক্ষা, হরমোন পরীক্ষা ইত্যাদির মাধ্যমে রোগের কারণ নির্ণয় করবেন। প্রয়োজনে ল্যাপারোস্কপি, জরায়ুর ভেতরে ক্যামেরা দিয়ে পরীক্ষা, সিটিস্ক্যান ইত্যাদির মাধ্যমেও মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণ জানবেন।

মাসিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণের প্রাকৃতিক উপায়
আয়রন সাপ্লিমেন্ট
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, আয়রনের অভাবে পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। তাই রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণে পিরিয়ডের সময় আয়রন সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

আইস প্যাক
পিরিয়ড চলাকালে একটি আইস প্যাক তলপেটে আনুমানিক ২০ মিনিট রেখে দিন। বিশেষ করে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের সময় দিনে কয়েকবার এটা করুন। এটা রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করতে ভূমিকা রাখবে।

পার্সলে
পিরিয়ড ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে নারীরা দুটি প্রধান সমস্যায় ভুগেন। একটি হচ্ছে প্রদাহজনিত সমস্যা, অন্যটি আয়রনের ঘাটতি। পার্সলে একটি জাদুকরী খাবার, যা এই দুটি সমস্যার সমাধান করতে পারে। ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ হওয়ায় পার্সলেতে প্রচুর পরিমাণ আয়রণ থাকে, যা রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। আর পার্সলেতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহ হ্রাস করে। তাই পিরিয়ডের সময় পার্সলে চিবিয়ে খাবেন। অথবা এক গ্লাস পার্সলে জুস তৈরি করেও খেতে পারেন।

দারুচিনি চা
পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে এক কাপ গরম দারুচিনি চা নিন। অল্প অল্প চুমুক দিয়ে ধীরে ধীরে চা পান করুন। এটা জরায়ু থেকে রক্তপ্রবাহকে দূরে রাখে এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া দেহের প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ করতেও এটা ভূমিকা রাখে।

মাসিকের ব্যাথা প্রতিরোধ করণীয়
বা পিরিয়ডের ব্যাথা কি করবেন

প্রচুর পানি পান
প্রচুর পরিমাণ পানি পান মাসিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করুন।

খাবারে সতর্কতা
চিনি, চর্বি এবং লবণযুক্ত খাবার পরিহার করুন। অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি খাবার যেমন চেরি, ব্লুবেরি, টমেটো, বোম্বাই মরিচ ইত্যাদি খাওয়া এসময় উপকারী। এছাড়াও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ মাছ, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ বিভিন্ন বিচি, কাঠ বাদাম এবং সবুজ শাক পিরিয়ডের ব্যাথা কমাতে পারে। চিনি, পাউরুটি, পাস্তা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, বিস্কুট, অনিয়ন রিং, তামাক এবং ক্যাফেইন বর্জন করুন।
 
ক্যাফেইন বর্জন
ক্যাফেইন সমৃদ্ধ খাবার যেমন কফি, চা, কোল্ড ড্রিঙ্কস, চকলেট, এনার্জি ড্রিঙ্কস ইত্যাদি বর্জন করুন। আপনার নিয়মিত কফি পানের অভ্যাস থাকলে ক্যাফেইন উইথড্রালl সিনড্রোম থেকে বাঁচতে একবারে কফি বর্জন না করে ধীরে ধীরে খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে আনুন।

ব্যায়াম
ব্যায়াম অনেকেরই পিরিয়ডের ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে থাকে। পিরিয়ড বা মাসিকের ব্যাথা থেকে বাঁচতে নিয়মিত হাঁটা, দৌড়ানো কিংবা সাঁতার কাটতে পারেন।

তাপ প্রয়োগ 
পিরিয়ডের ব্যাথার সময় হট ওয়াটার ব্যাগ বা গরম পানির বোতল তলপেটে রাখলে ব্যাথা কমে আরাম অনুভূত হতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, তলপেটে তাপ প্রয়োগ পিরিয়ডের ব্যাথা কমানোর ক্ষেত্রে ব্যাথার ওষুধের মতোই কাজ করে।

মালিশ
ম্যাসাজ বা মালিশ এর মাধ্যমে পিরিয়ডের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এটি শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ায় এবং ব্যথার উপশম করে।

আকুপাংচার এবং আকুপ্রেশার
আকুপ্রেশার হচ্ছে শরীরের বিভিন্ন অংশে চাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করা। আকুপাংচার হচ্ছে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে সুই ফুটিয়ে চিকিৎসা করা। আকুপাংচার এবং আকুপ্রেশার পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

গরম পানিতে গোসল
গরম পানিতে গোসল আপনার মাংসপেশীকে রিল্যাক্স করে মাসিকের ব্যাথা কমাতে পারে। পিরিয়ডের ব্যাথা হলে বাথটাবের গরম পানিতে রিল্যাক্স করুন অথবা গরম পানিতে গোসল করুন।

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল
মাসিকের ব্যাথা তীব্র হলে অনেক সময় চিকিৎসক আপনাকে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল গ্রহণ করার পরামর্শ দিতে পারেন। এটি আপনার পিরিয়ড নিয়ন্ত্রণ করে আপনার ব্যথা উপশম করতে পারে।

পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম
প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণ ঘুম আপনার পিরিয়ডের ব্যাথা কমাতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে ,ইনসমনিয়ায় আক্রান্ত নারীদের মধ্যে পিরিয়ডের ব্যাথা সুস্থ নারীদের চেয়ে অনেক বেশি হয়।

আরও পড়ুনঃ 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ